প্রতিনিধি ২৯ মার্চ ২০২৫ , ৪:০৮:৫৬ প্রিন্ট সংস্করণ
বরিশাল ব্যুরো॥বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর তোপের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বরিশালে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার ও পলাতক আ.লীগ নেতারা তাদের বাড়ি ও জমি কম দামে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি জনবল সংকট সহ নানা কারণে ইতোমধ্যে বরিশালে আ.লীগের তিন নেতা এবং সরকারের সাবেক এক আমলার বাড়ি ও ফ্ল্যাট বিক্রির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গেছে।
এরমধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর প্রায় ৭ একরের বাগানবাড়ি,সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিমের বেগম ভবন,বিএনপি থেকে সর্বশেষ আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া ব্যারিস্টার শাহাজান ওমরের বীর উত্তম ভবন এবং মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুলের ফ্ল্যাট ও জমি।
জানা গেছে,বরিশাল নগরীর নবগ্রাম রোডে সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর বেগম ভিলা নামের বাড়িটি ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে।প্রায় তিন কাঠা জমির ওপরে ৫ তলাবিশিষ্ট বাড়িটির নির্মাণকাজ ২০২৩ সালের শেষ দিকে শেষ হয়।ভবনটি থেকে তার সব রাজনৈতিক কার্যক্রম চলত।গত বছরের ৪ ও ৫ আগস্ট বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বাড়িটিতে তিন দফা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।গত জানুয়ারিতে ৫ তলার ‘বেগম ভিলা’ আড়াই কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাহিদ ফারুক শামিমের একাধিক ঘনিষ্ঠজন জানান,২০২৩ সালের শেষ দিকে বাড়ির নির্মাণকাজ শেষ হয়।এর আগে বরিশালে তার কোনো বাড়ি ছিল না।
তারা জানান,সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিমের ঢাকায় একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাট রয়েছে।এ ছাড়া চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় জমি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।গত বছরের ৫ আগস্টের পর তিনি বরিশাল ও ঢাকার বিভিন্ন মামলায় বন্দি থাকায় সেগুলো দেখভাল করার মতো জনবল নেই।এ ছাড়া রয়েছে আর্থিক সংকট।ফলে বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছেন।
বরিশাল নগরীর ব্র্যান্ড কম্পাউন্ড এলাকায় আলিশান ৩ তলা ডুপ্লেক্স বাড়িটি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগের আসা প্রবীণ রাজনীতিক ব্যারিস্টার শাজাহান ওমরের।
৫ আগস্টের পর এই বাড়িটির মালিকানাও বদল হয়েছে।৫০ শতাংশের বেশি জমিতে থাকা বাড়িটির নতুন মালিক অপসোনিন কোম্পানি লিমিটেড।ইতোমধ্যে তাদের নিরাপত্তাকর্মীরা বাড়িটির সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছেন। তবে তারা এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।
নিরাপত্তাকর্মীরা জানান,গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বাড়িটির নিরাপত্তার দায়িত্ব তাদের দেওয়া হয়েছে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালকের দপ্তরের বিপরীতে অবস্থিত বাড়িটি গত বছরের ৫ আগস্ট বিক্ষুব্ধ জনতা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুল তার ১০ তলা বাড়ির অধিকাংশ ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিয়েছেন।নগরীর নাজিরপুল এলাকায় স্ব-রোডে প্রায় ৬ কাঠা জমির ওপর বাড়িটি করা হয়েছে। একসময়ে বরিশাল নগরীর প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর একান্ত সহচর নীরব হোসেন টুটুল ৫ আগস্টের পর ভারতে পাড়ি জমান বলে জানা গেছে।
টুটুলের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন,বাড়ি দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যা দেখা দেওয়ায় ১০ তলা ভবনের অধিকাংশ ফ্ল্যাট বিক্রি করা হয়েছে।পাশাপাশি বাড়ির সামনের জমিও প্লট আকারে বিক্রি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সহকারী একান্ত সচিব খায়রুল ইসলামের আলোচিত বাগানবাড়িটিও বিক্রি করা হচ্ছে।বরিশাল নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের রুপাতলী গ্যাস টারবাইন সড়কের প্রবেশমুখে এটি অবস্থিত।প্রায় ৭ একর জমির ওপরে থাকা আলোচিত বাড়িটি বিক্রির বিষয়ে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব ও সাবেক কাউন্সিলর জিয়া উদ্দিন সিকদারের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।শতকোটি টাকা মূল্যমানের ওই বাড়িটি খুবই কম টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল তালেব বলেন,৫ আগস্টের পর থেকেই বাড়িটি বিক্রি করা হবে- এমন গুঞ্জন চলছে।এখন শোনা যাচ্ছে,বিএনপির এক নেতার কাছে বাড়িটি বিক্রির বিষয়ে কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়েছে।