প্রতিনিধি ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ২:০৬:৫৮ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।সরকারের হটানোর’ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১০ দফা দাবি আদায়ে ঢাকায় ফের পদযাত্রা কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন,আগামী ৯ ও ১২ ফেব্রুয়ারি দলের মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতা-কর্মীরা পদযাত্রা করবেন।
মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন বিএনপি মহাসচিব এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
সোমবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই কর্মসূচির সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান ফখরুল।
তিনি বলেন ৯ ফেব্রুয়ারি মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে গোপীবাগ ব্রাদার্স ক্লাবের মাঠ থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত এবং ১২ ফেব্রুয়ারি মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে শ্যামলী ক্লাব মাঠ থেকে লিংক রোড,শিয়া মসজিদ মোড়,তাজমহল রোড,নূরজাহান রোড়,বিআরটিসি বাস স্ট্যান্ড মোড়, মোহাম্মদপুর মসজিদ সড়ক হয়ে বছিলা সাত রাস্তার মোড় পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করা হবে।
এই আন্দোলনে তৃণমূলের জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ইউনিয়ন পর্যায়েও পদযাত্রা করতে চায় বিএনপি।সে লক্ষ্যে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে রেখেছে দলটি।
গণতন্ত্র মঞ্চসহ সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট যুগপৎভাবে একই দিনে এই কর্মসূচি রেখেছে।
ফখরুল বলেন,আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার কর্মসূচি দিয়েছি।দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি,বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি প্রতিবাদে আমরা আবারো রাজপথে কর্মসূচি দেব।”
সামনে হরতাল-অবরোধের মত কর্মসূচি থাকবে কি না প্রশ্ন করলে বিএনপি মহাসচিব বলেন,১০ দফার চলমান আন্দোলন কোন পথে এগোবে,কোন পর্যায় যাবে,তা ‘ভবিষ্যৎ ও জনগণই’ বলে দেবে।
“এখন পর্যন্ত নাই (হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি)।ভবিষ্যতে আসবে কিনা এটা বলতে পারব না।প্রয়োজন বলে দেবে, প্রয়োজন বলে দেবে ভবিষ্যতে কী হবে।
“জনগণই বলে দেবে।জনগণ যদি বলে যে,এখন হরতাল, চাকা বন্ধ,তখন হরতাল হবে।আমরা তো বলছি,শান্তিপূর্ণ, একেবারে পিসফুল।আমরা সবসময় পিসফুল প্রোগ্রাম চাচ্ছি, আমরা বিশ্বাস করি এটায়।”
ভারতে আন্দোলনের ধরনের সাথে তুলনা টেনে মির্জা ফখরুল বলেন,সমস্যাটা ওই জায়গায়।এর আগে আমি অনেকবার বলেছি যে,আপনারা আন্দোলন বলতেই ওইটা (হরতাল-অবরোধ)বোঝেন।সমস্যাটা ওইটা আর কি- এটা ঠিক না। আপনি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে দেখেন।কয়টা ওখানে হরতাল হয়?হরতাল হয় না।আন্দোলন হয়।রাস্তায় লোক নামে,লক্ষ লক্ষ লোক হেঁটে যায়… ভারত জুড়ে প্রোগ্রাম করল কংগ্রেস। হাঁটলো ১৪৯ দিন ধরে, হাঁটছে… এগুলো তো আন্দোলন।
“আমরা যে কর্মসূচি করছি- এগুলো কি আন্দোলন না?এই আন্দোলনে আন্দোলনে আন্দোলনের মাধ্যমে দেখবেন একদিন জনমত এমন জায়গায় আসবে যে,তখন ওই হরতাল দিতে হবে না।ওরা এমনিতেই চলে যাবে।”
সরকারকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, “ওরা (সরকারি দল) তো অলিখিতভাবে,অঘোষিতভাবে হরতাল দেয়।আমরা যখন বিভাগীয় সমাবেশ করেছিলাম তখন তারা তিন দিন আগে থেকে হরতাল দেয়,সব বন্ধ করে দেয়,রাস্তা-ঘাট, বাস-ট্রাক, স্টিমার-লঞ্চসহ পরিবহন।
“আওয়ামী লীগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল,ভাঙচুর করেছিল।সেটা আপনারা জানেন। তবে আমরা এটা মনে করি না,আমরা বিশ্বাস করি যে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই তাদেরকে পরাজিত করব।”
‘পাল্টা কর্মসূচি থেকে সরে আসুন’ফখরুল বলেন, “আমাদের প্রত্যেকটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে।আবার তারা ইউনিয়ন পর্যায়েও পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।এতে করে আওয়ামী লীগের যে মূল চরিত্র,সেটা উন্মোচিত হচ্ছে।“
আওয়ামী লীগকে ‘সন্ত্রাসী’ দল আখ্যায়িত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন,এটা বলতে দ্বিধা নেই যে,তারা সন্ত্রাস,ত্রাস সৃষ্টি করা,ভয় দেখানো,আক্রমণ করা,হামলা করা… তারা অত্যন্ত পারদর্শী।তো ওইভাবে তারা আবারো আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে নস্যাত করার জন্য পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে।”
পাল্টা কর্মসূচি থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন,এই পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে তারা গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে,পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে তারা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করার চেষ্টা করছে, তারা চেষ্টা করছে যে,একটা অনিশ্চয়তার দিকে বাংলাদেশকে নিতে যেতে।আমি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি আওয়ামী লীগকে, তারা ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মসূচি প্রত্যাহার করবেন।”
মির্জা ফখরুল জানান,সোমবার রাতে তাদের স্থায়ী কমিটির সভায় তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় গভীর সমবেদনা প্রকাশ করা হয় দলের পক্ষ থেকে।
এছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ১৪টি মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়ে অবিলম্বে দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি রেখেছে স্থায়ী কমিটি।
সম্প্রতি ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের আয়োজিত আলোচনাসভায় খসড়া’তথ্য সংরক্ষণ আইন’ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্টদূতের উদ্বেগ প্রকাশের বিষয়টি তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই বিষয়টি স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে।সভা মনে করে প্রস্তাবিত আইন স্বাধীনতা,গণতন্ত্র,মানবাধিকার ও মুক্ত ব্যবসার পরিপন্থি।বেআইনি কর্তৃত্ববাদী সরকার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার লক্ষ্যে একের পর এক নির্বতনমূলক আইন প্রণয়ণের মাধ্যমে দেশকে পুরোপুরি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।”
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান,কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কামরুজ্জামান রতন,নাজিম উদ্দিন আলম,মাহবুবুল হক নান্নু ও মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
















