প্রতিনিধি ১৩ জুলাই ২০২৫ , ৬:৪৬:২০ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।ঢাকার বনানী এলাকায় বিক্ষোভ করা সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকরা প্রায় ছয় ঘণ্টা পর সড়ক ছেড়েছেন।সেনাবাহিনী ও পুলিশের মধ্যস্থতায় বিআরটিএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনার শর্তে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তারা সড়ক থেকে সরে গেলে যান চলাচল শুরু হয়।

ঢাকা জেলায় নিবন্ধিত অটোরিকশার মহানগরে চলাচলের অনুমতি নেই।সে কারণে পাঁচ শতাধিক অটোরিকশা চালক তাদের ‘পূর্ব নির্ধারিত’ এলাকায় অবাধ চলাচল কিংবা ঢাকা সিটিতে চলাচলের অনুমতি চেয়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বনানী বিআরটিএ কার্যালয়ের দুইপাশের সড়ক বন্ধ করে দেন।
বেলা ৩টার দিকে উত্তরাগামী অংশ ছেড়ে দিলেও আরেকপাশে অবস্থান অব্যাহত রাখেন চালকরা।সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকার এই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক আটকে রাখায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।এর প্রভাব পড়ে ঢাকার অন্যান্য সড়কেও।
গুলশান-বনানী হয়ে যানবাহনগুলোকে ডাইভারশন দেওয়ায় যানজট ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের অলিগলিতে।ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে আটকে থেকে অনেক অফিস ফেরত যাত্রীকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়।
ট্রাফিক গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. জিয়াউর রহমান বলেন,অটোরিকশা চালকরা রাস্তা ছেড়ে দিলে সাড়ে ৬টার দিকে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। যানবাহনের বাড়তি চাপ সামলাতে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে।”
রাত পৌনে ৮টার দিকে ট্রাফিক বিমাবন্দর জোনের সহকারী কমিশনার শারমিন আকতার চুমকি বলেন,“বনানীতে সড়ক বন্ধ থাকার কারণে গাড়ির জটলা কাওলা পেরিয়ে বিমানন্দর গোলচত্বর এলাকা পর্যন্ত চলে আসে।সড়ক ছেড়ে দিলেও গাড়ির জটলা রয়েছে।গাড়ি এগোচ্ছে কিন্তু খুবই সামান্য গতিতে।”
সন্ধ্যা ৬টার দিকে কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনে থেকে স্ত্রী-সন্তান ও বড় একটি ব্যাগসহ হেঁটে বনানী আসা তরিকুল ইসলাম বলেন,“মন চাইলেই রাস্তায় নাইম্মা আন্দোলন, মাঝখানে আমাগো ভোগান্তি।বাচ্চাটারেও হাঁটাইয়া নিয়া যাইতাছি।”
বনানীতে অফিস শেষ করে পায়ে হেঁটেই বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করেছেন আজিমপুরের বাসীন্দা তরিকুল ইসলাম।তিনি বলেন, “এই যে কিছু হলেই যার খুশি রাস্তায় নেমে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার ট্রেন্ড শুরু হয়েছে,দিনের পর দিন এটা চলছেই।একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের জন্য হাজার-হাজার, লাখ-লাখ মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে।
“অফিস শেষের পরে ভেবেছি রিকশা নিয়ে ভেতর দিয়ে মহাখালী গিয়ে বাসে উঠব।রিকশায় উঠে অনেক্ষণ বসে ছিলাম। বাধ্য হয়ে হাঁটা শুরু করেছি।দেখি সামনে গিয়ে বাস বা কিছু একটা নিয়ে বাসায় যাব।”
বনানী এলাকার রিকশাচালক আমির হোসেন জানান, দিনভরই বনানীর প্রতিটা অলি-গলিতে যানজট লেগে ছিল। প্রধান সড়ক বন্ধ থাকায় প্রাইভেটকারগুলো অলি-গলিতে প্রবেশ করায় এই জটলার সৃষ্টি হয়।
সড়ক ছাড়ার আগে কয়েকটি অটোরিকশা আড়াআড়ি করে সড়ক বন্ধ করে অবস্থান চালিয়ে যান চালকরা।এ সময় অনেক চালককেই ‘কাফনের কাপড়’ গায়ে মাথায় বেধে সড়কে শুয়ে বসে থাকতে দেখা যায়।
মোটরসাইকেল চালকদের কেউ কেউ ফুটপাত ধরে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষোভরতদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়।পরে বাধ্য হয়ে তাদের পিছু হটতে দেখা যায়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে আনা পুলিশের সাঁজোয়া যানের গায়েও ব্যানার ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা।
দুপুর থেকে বনানীতে আটকে থাকা ভূঁইয়া পরিবহনের একটি বাসের চালক রুবেল বলেন,এইখানে আসার পরেই রাস্তা বন্ধ কইরা দেয়,তারপর এইখানেই বইসা আছি।সামনে যাওয়ার উপায় নাই,পেছনে সরারও উপায় নাই।”
রাস্তা অবরোধের পাশাপাশি বিকেলে আন্দোলনকারীরা বিআরটিএ কার্যালয়ের মূল ফটকে অবস্থান নেন।ফলে ভেতরে সবাই অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাড়তি পুলিশ ও সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়।
সেনা ও পুলিশের মধ্যস্থতায় আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধিদল ভেতরে বৈঠকের জন্য গেলে বাকিরা সড়ক ছেড়ে দিতে রাজি হন।পরে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনকারীদের সড়কের ফুটপাতে উঠিয়ে দিলে যান চলাচল শুরু হয়।
কেন এই আন্দোলন?
‘ঢাকা থ সিএনজি অটোরিকশা মালিক শ্রমিক ঐক্যজোটের’ ব্যানারে এই আন্দোলনকারীদের সবাই ঢাকা জেলায় চলাচলের অনুমতিপ্রাপ্ত অটোরিকশার মালিক-শ্রমিক।এই নম্বরপ্লেটের প্রায় তিন হাজার অটোরিকশাকে শুধুমাত্র ঢাকা জেলায় (সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে) চলাচল করার অনুমতি দেওয়া হয়।
কিন্তু পরে বেরাইদ,বাড্ডা,ভাটারা,সাঁতারকুল,হরিরামপুর, দক্ষিণখান,শ্যামপুর,মাতুয়াইল,ডেমরা,দনিয়া,সারুলিয়া,মান্ডা এলাকায় থাকা ঢাকা জেলার ১৬টি ইউনিয়ন ঢাকা সিটি করপোরেশনের অন্তর্গত করা হয়।ফলে এক সময় ঢাকা জেলার আওতায় থাকা সেসব এলাকায় ‘ঢাকা থ’ নম্বরপ্লেটের অটোরিকশার চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
চালকরা বলছেন,নতুন করে সিটির আওতায় সেসব এলাকা গেলেও তাদেরকে যখন অনুমতি দেওয়া হয়,তখন সেসব এলাকায় চলাচল করতে পারতেন।এখন সেসব এলাকায় প্রবেশ করলেই তাদের গাড়ি তিন মাসের জন্য জব্দ করাসহ মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা দিতে হয়।তারা এই অবস্থা থেকে ‘মুক্তি চান’।
আগের সেসব জায়গায় চলাচলের অনুমতি না দিলে তারা ওই নম্বর প্লেট দিয়েই ঢাকা শহরে ‘চলাচলের অনুমতি’ চান। কারণ ঢাকা জেলার একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে যেতে ঢাকা সিটির মধ্য দিয়েই যেতে হয়।
ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে আন্দোলনে যোগ দেওয়া মানিক হোসেন বলেন,“আপনি আমার জায়গা আমারে ছাইড়া দেন। আমার জায়গায় আমি গেলেই ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করব,গাড়ি তিন মাসের জন্য ডাম্পিংয়ে পাঠাইব।
“আমার এলাকা কমায় দিছেন,এরমধ্যে ব্যাটারি রিকশা সব দখল কইরা ফেলছে।আবার ট্যাক্স আমরা ঢাকা শহরের গাড়ির সমানই দিই।এহন আমার ইনকাম না হইলে আমি ট্যাক্সটা দিমু কেমনে?”
এই অবস্থা থেকে ‘মুক্তি’ না মিললে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন মানিক।
তিনি বলেন,আইজ আমরা আইসা রাস্তা বন্ধ করছি।পরের দিন গাড়িসহ আইসা এইখানে রাইখা দিমু।”








