প্রতিনিধি ৭ নভেম্বর ২০২৪ , ১:৫০:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ
রাঙামাটি প্রতিনিধি।।রাঙামাটি শহরের জেলা প্রশাসকের বাসভবনের পাশে কাপ্তাই হ্রদের তীরে অনেক সময় উৎসুক মানুষের জটলা দেখা যায়।কেউ কেউ নৌকা নিয়ে হ্রদের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে তাকিয়ে থাকেন নিচের জলরাশির দিকে।কী দেখেন তাঁরা? নতুন কেউ এমন দৃশ্যে অবাক হবেন।কিন্তু শহরের বাসিন্দারা জানেন,তাঁরা চাকমা রাজার সুরম্য রাজপ্রাসাদ দেখতে যান।কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর যে প্রাসাদটি তলিয়ে গেছে হ্রদের নিচে।৬৪ বছর ধরে পানির নিচে ডুবে আছে রাজপ্রাসাদটি।কাপ্তাই হ্রদের পানি যখন অস্বাভাবিক রকমের কমে যায় তখন জলের নিচে দেখা যায় প্রাসাদটিকে।মানুষজন অতীত ইতিহাসের সাক্ষী হতে জেলা প্রশাসকের বাংলোর কাছে হ্রদের তীরে ভিড় জমান।

রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে ডুবে থাকা চাকমা রাজবাড়ির পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি এত বছরেও।এর একাংশ তার নিদারুণ ইতিহাস নিয়ে জলের নিচে রয়ে গেছে আজও।পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর দুঃখ-বেদনার প্রতীক এই ডুবন্ত রাজবাড়ি।বিশাল জনপদ ডুবিয়ে যে প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি করা হয় এই হ্রদ,তাতে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন লাখো মানুষ।সেই ইতিহাসই যেন বারবার মনে করিয়ে দেয় এখানকার বাসিন্দাদের।
১৯৬০ সালে কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ নির্মাণের পর রাঙামাটির হাজার হাজার বাড়িঘর পানির নিচে ডুবে যায়।ডুবে যায় চাকমা রাজবাড়িও।১৯৮৬ ও ২০০৬ সালে কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে যাওয়ায় পুরোনো সেই রাজবাড়িটি জলের নিচ থেকে ভেসে উঠেছিল ওপরে।তখন স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে অনেকেই বাড়ির ইট খুলে নিয়ে আসেন।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়,চাকমা রাজাদের আদি বাড়িটি ছিল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়।সেই প্রাসাদে বসেই রাজত্ব করেন বিখ্যাত চাকমা রানি কালিন্দী রায়। ১৮৭৪ সালে চাকমা রানি কালিন্দী মারা যান।এরপর রাজপুত্র হরিশ্চন্দ্র রায় রাজা হন।তিনি রাজা হওয়ার তিন বছর পর রাঙ্গুনিয়া থেকে রাঙামাটি চলে আসেন।তখন নির্মিত হয় ডুবে যাওয়া রাজপ্রাসাদটি।সেই প্রাসাদেই দীর্ঘ ৮৪ বছর রাজকার্য পরিচালনা করেন হরিশ্চন্দ্র।পরে ১৯৬০ সালে পাকিস্তান সরকার কর্ণফুলী নদীতে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করলে রাজবাড়ি ডুবে যায়।এরপর শহরের বর্তমান রাজবাড়ি এলাকায় চাকমা রাজার নতুন প্রাসাদ নির্মিত হয়।
চাকমা সার্কেল কার্যালয়ের কর্মকর্তা সুব্রত চাকমা বলেন, ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ তৈরির পর চাকমা সার্কেলের রাজবাড়ি গভীর পানির নিচে ডুবে যায়।ডুবে যাওয়া পর নতুন রাজবাড়ি নির্মাণ করা হয়।পুরোনো রাজবাড়ির পাশেই ছিল ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধবিহার।সেই বিহারের বিশাল বুদ্ধমূর্তি এখনো রয়ে গেছে,কিন্তু ডুবে গেছে মন্দিরটি।এ ছাড়া পুরোনো প্রাসাদ থেকে একটি কামান নিয়ে আসা হয়।সেটিও চাকমা রাজার বর্তমান কার্যালয়ের পাশে রাখা আছে।
শিক্ষাবিদ ও সাবেক মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান বলেন, ‘ডুবে যাওয়া চাকমা রাজবাড়ির কথা এখনো আমার মনে আছে।আমি যখন ছোট ছিলাম তখন রাজ পুণ্যাহ দেখতে সেখানে যেতাম।অসাধারণ স্থাপত্যের সেই বাড়িটি পানির নিচে চলে যাবে,তা ভাবতে পারিনি কখনো।’

















