অপরাধ-আইন-আদালত

মানুষ মৃত্যুর সময় কখনো মিথ্যে বলেনা-আত্মহত্যার আগে সুইসাইড নোটে এমন কথা উল্লেখ!

  প্রতিনিধি ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৩:১৭:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ

নীলফামারী প্রতিনিধি।।মানুষ মৃত্যুর সময় কখনো মিথ্যে বলেনা। আমার বিয়ে হয়েছে ২০০১ সালের ১২ ডিসেম্বর। আমার মা বাবা নেই। বিয়ের পর থেকেই শ্বাশুড়ী ও স্বামী-দেবর মানসিক নির্যাতন করছে।

দেবরের বিয়ের পর তাঁর স্ত্রী ডাঃ অমৃতা আগরওয়াল তাদের সাথে যোগ দিয়ে মানসিক নির্যাতন চালায়। ওঁরা আমাকে ৪ বার মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। বেঁচে আছি সেটা আমার ভাগ্য। কিন্তু তাঁদের অত্যাচারে আমার আর বেঁচে থাকা হলোনা।”আত্মহত্যার আগে সুইসাইড নোটে এমন কথা উল্লেখ করে গেছেন নীলফামারীর সৈয়দপুরে ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর স্ত্রী জ্যোতি আগারওয়াল ওরফে ববি।

সেই সুইসাইড নোটের ভিত্তিতে আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী স্বামী সুমিত কুমার আগারওয়াল ওরফে নিক্কি কে ৪৫ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।রোববার রাতে রংপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সুমিত সৈয়দপুর উপজেলা হিন্দু কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি। তিনি সৈয়দপুরের শিল্পপতি সুশীল কুমার আগারওয়ালার বড় ছেলেএর আগে একই দিন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ওই গৃহবধূ।

ওই ঘটনায় রাত ১২টার পর ১৯ সেপ্টেম্বর জ্যোতি আগারওয়ালের বড় ভাই বিমল কুমার জাজোদিয়া আগারওয়াল বাদী হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে ৪জনকে আসামী করে সৈয়দপুর থানায় মামলা করেন।

মামলায় অন্যান্য আসামীরা হলেন সুইসাইড নোটে উল্লেখ করা জ্যোতির শ্বাশুড়ী উমা দেবী ৬০ দেবর অমিত কুমার আগারওয়াল ও অমিত কুমারের স্ত্রী ডাঃ অমৃতা কুমার আগারওয়াল ৩৫।সুইসাইড নোট ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২১ বছর আগে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পুরাতন বাজার এলাকার মৃত পুরনমল জাজোদিয়া আগারওয়ালের মেয়ে জ্যোতি আগারওয়ালের সঙ্গে সৈয়দপুরের নতুন বাবুপাড়ার ডাঃ বদরুজ্জামান রোডের বাসিন্দা সুশিল কুমার আগারওয়ালের ছেলে সুমিত কুমার আগারওয়ালের সাথে বিয়ে হয়।

বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন বিশেষ করে উল্লেখিত ৪ জন নির্যাতন চালিয়ে আসছে। শ্বাশুড়ী উমা দেবী তাঁর জ্যোতি বাচ্চা দুটোকেও ভয় দেখিয়ে আলাদা করে রাখেন। বাচ্চাদের রক্ষার জন্য আকুতি জানিয়েছেন জ্যোতি।সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানান গ্রেপ্তার আসামী সুমিত কুমার আগারওয়ালকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

বাকি আসামীদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া সত্যতা যাচাইয়ের জন্য উদ্ধার সুইসাইড নোটটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে জ্যোতি আগারওয়ালের মরদেহ রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে আনা ফ্রিজিংভ্যানে রাখা হয়েছে। তার আত্মীয় স্বজন আসার পর মঙ্গলবার ২০ সেপ্টেম্বর তার মরদেহের সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় শ্মশানে সৎকার করা হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।উল্লেখ যে, এক সপ্তাহ আগে দুই পৃষ্ঠার একটি চিঠি লিখে সৈয়দপুর হিন্দু কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের কাছে ম্যাসেঞ্জারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় জ্যোতি।

কিন্তু কেউই তার উপর পারিবারিক অত্যাচারের বিষয়ে সুরাহা করতে এগিয়ে না আসায় গত বৃহস্পতিবার ১৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে অস্বাভাবিক পরিমাণে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।শহীদ বদিউজ্জামান সড়ক এলাকায় ভাড়া বাড়িতে এই ঘটনায় গুরুত্বর অসুস্থ অবস্থায় পরিবারের সদস্যরা টের পায়।তাৎক্ষণিক হাসপাতালে না নিয়ে পারিবারিকভাবে চিকিৎসা করতে থাকে নিক্কির ছোট ভাই অমিত কুমার আগারওয়ালার স্ত্রী ডা. অমৃতা কুমারী আগারওয়াল।কিন্তু অবস্থার অবনতি হলেও গুরুত্ব দেয়া হয়নি।শুক্রবার পরিস্থিতি বেগতিক হওয়ায় বাধ্য হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় তারা।সেখানে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে আইসিইউ চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত রোববার দুপুর ১২ টার দিকে মারা যায় জ্যোতি।

আরও খবর

Sponsered content