সারাদেশ

মাদারীপুর সার্কেল অফিসের দুই রাজস্ব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে

  প্রতিনিধি ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ , ৯:৫০:৩০ প্রিন্ট সংস্করণ

মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি।।কাস্টমস ও এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ মাদারীপুর সার্কেল অফিসের দুই রাজস্ব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।এ বিষয়ে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

১০ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ফাঁস হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, দুই রাজস্ব কর্মকর্তা এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে দর কষাকষি করছেন।এমনকি চাহিদামতো প্রতিমাসে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাসোহার টাকা চাইছেন।

ভিডিওতে দেখা যায়,কাস্টমস ও এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ মাদারীপুর সার্কেল অফিসের রাজস্ব কর্মকর্তা (সার্কেল-২) রফিকুল ইসলাম ও (সার্কেল-১) মো. ইমরান কবীর অফিস কক্ষে বসে ঘুষের টাকা নিচ্ছেন।

ফাঁস হওয়া ভিডিওর শুরুতে এক ব্যবসায়ীকে উদ্দেশ করে রফিকুল ইসলাম বলেন,এইডা কি আনছেন?পরে ৫০০ টাকার কয়েকটি নোট হাতে গুনে পকেটে ভরেন রফিকুল। ’

এর পর রাজস্ব কর্মকর্তা রফিকুল ওই ব্যবসায়ীকে বলেন, ‘কি যে করেন আপনারা?মানে… মাদারীপুরের লোক এত ধনী,দেশের মধ্যে তৃতীয় ধনী জেলা।আপনারা কেন এমন করেন?’

একপর্যায় ব্যবসায়ীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যা দিছেন আমি এটি নিতে পারব না।ইমরান সাহেবকে কী দেব?আমি কীভাবে বোঝাব?স্যারে তো বকব!আমি এটা নিতে পারব না।এই ৩ (তিন হাজার) আমি নিতে পারব না। বাকিটা কখন দেবেন?আপনারা স্যারকে বলে যান—দেখা করে যান।কারণ তিনি (ইমরান কবীর) আপনার অরিজিনাল স্যার। সেই আপনাকে বাঁচাতে পারব,মারতে পারব।বুঝচ্ছেন!’

শেষ কথায় রফিকুল ইসলাম ওই ব্যবসায়ীকে বলেন,প্রতি মাসে অফিস খরচ এক হাজার টাকা দিয়ে যাবেন।এটা যেন আর না বলা লাগে।কথা যেন নড়চড় না হয়।মাসের ১০ তারিখের মধ্যে টাকা আমার কাছে দিয়ে যাবেন।

ভিডিওটির ৮ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডে পরে দেখা যায় রাজস্ব কর্মকর্তা (সার্কেল-১) মো. ইমরান কবীরকে।

তিনি ওই ব্যবসায়ীকে উদ্দেশ করে বলেন,আপনার দোকানের আশপাশে যারা দিচ্ছে ওয়েল অ্যান্ড গুড।আর যারা দিচ্ছে না,তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।আপনার নম্বর দিয়ে যান। পরে ওই ব্যবসায়ী এক হাজার টাকা ইমরান কবীরের টেবিলে রাখলে তিনি টাকাটা নেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,ভিডিওতে থাকা ওই ব্যবসায়ীর নাম অমিত হাসান।তিনি মাদারীপুর পুরান বাজারের পোশাক ব্যবসায়ী।

জানতে চাইলে ওই ব্যবসায়ী বলেন,আমার ছোট পোশাকের দোকান।প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে ভ্যাট দিতে বলেন স্যাররা।পরে অফিসে গেলে তারা এক হাজার টাকা করে ভ্যাট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।কিন্তু শর্ত হলো— প্রতিমাসে অফিসে তিন হাজার টাকা দিতে হবে।

ভিডিও সম্পর্কে রাজস্ব কর্মকর্তা (সার্কেল -১) মো. ইমরান কবীর বলেন,ভিডিওটি আমাদের নয়,এটি সাজানো।এবিষয় আমার আর কোনো মন্তব্য নেই।

রাজস্ব কর্মকর্তা (সার্কেল-২)রফিকুল ইসলাম বলেন,ওই ব্যবসায়ী আমার কাছে আসার পর তাকে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে বলেছিলাম,তার কাছে কোনো অনৈতিক দাবি করা হয়নি।

ঘুস দাবির ভিডিও প্রসঙ্গে তিনি বলেন,কথোপকথনগুলো ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে।এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ।

কাস্টমস ও এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ মাদারীপুর সার্কেল অফিসের বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং ডেপুটি কমিশনার মো. এনামুল হক ফোনে বলেন,আপনারা তো আসছিলেন,নিউজ করে দেন।অসুবিধা নেই।বলেই তিনি কল কেটে দেন।

এ বিষয়ে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন বলেন, দুই রাজস্ব কর্মকর্তা ঘুসগ্রহণের ভিডিওটি আমি দেখেছি।পুরো ঘটনাটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।অনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও খবর

Sponsered content