অপরাধ-আইন-আদালত

মডেল মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তার বেআইনি নয়-প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী,খোদা বখস চৌধুরী

  প্রতিনিধি ১৫ এপ্রিল ২০২৫ , ৫:৫২:৫৬ প্রিন্ট সংস্করণ

0Shares

নিজস্ব প্রতিবেদক।।প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী বলেছেন,মডেল মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তারে বেআইনি কিছু করা হয়নি।তাকে যে আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেটির প্রয়োগও এই দেশে নতুন নয়।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

সংবাদ সম্মেলনটি শুরু হয়েছিল পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান সফলভাবে আয়োজন করায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়,সংস্থা ও সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে।সংবাদ সম্মেলনের প্রথম পাঁচ মিনিট শুধু ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

প্রশ্নোত্তর পর্বের প্রথমে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন গত ৯ এপ্রিল মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তারের প্রয়োজন হল কেন?পহেলা বৈশাখের পর এরকম একটা আনন্দময় পরিবেশে কেন এই প্রশ্ন,তা নিয়ে প্রথমে উষ্মা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সরকারী ও পুলিশের সাবেক আইজিপি খোদা বখস চৌধুরী।

পরে প্রশ্নের জবাব দিয়ে তিনি বলেন,“আজকের মিটিংয়ের বিষয়টি ছিল আপনাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন।এর মধ্যে আপনার প্রশ্ন শুনে মনে হচ্ছে সরকার একটা বেআইনি কাজ করে ফেলেছে।পহেলা বৈশাখের একটা ভালো অনুষ্ঠান হয়েছে, আমরা সবাই আনন্দিত,এখানে এটা না বললে হত না?”

বিশেষ সহকারী বলেন,“এই আইন তো ব্যবহার হচ্ছে।এই একটা ক্ষেত্রে যে এই আইন ব্যবহার হচ্ছে,তা তো নয়।এটা তো বেআইনি কাজ না।তার (মেঘনা আলম) বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ এসেছে।এটা নিয়ে কাজ হচ্ছে।বিষয়টি হাইকোর্টে গেছে।

“বিচারাধীন বিষয়ে কথা বলা তো ঠিক হবে না।দেখি সেখান থেকে কী আসে।তবে একটা বিষয় নিশ্চিত প্রচলিত আইনেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে,এখানে কারো বিরুদ্ধে কোনো বেআইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”

৯ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে মেঘনা আলমকে আটক করা হয়।

আটকের আগে তিনি ফেইসবুক লাইভে এসে বাসার ‘দরজা ভেঙে পুলিশ পরিচয়ধারীরা’ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।তাকে আটক করার পরপরই লাইভটি বন্ধ হয়ে যায়।১২ মিনিটের বেশি সময় ধরে চলা ওই লাইভ এরপর তার আইডি থেকে ডিলিট হয়ে যায়।তবে এর আগেই ফেইসবুকে তা ছড়িয়ে পড়ে।

পরে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাবেক এই মিস আর্থ বাংলাদেশকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে উপস্থাপন করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।ডিবির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মহানগর হাকিম মো. সেফাতুল্লাহ বিশেষ ক্ষমতা আইনে মেঘনাকে ৩০ দিন কারাগারে আটক রাখার আদেশ দেন।

রোববার মেঘনা আলমের আটকাদেশ চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন তার বাবা বদরুল আলম।পরে তা শুনানি করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন।

সে দিনই বিশেষ ক্ষমতা আইনে তার আটকাদেশকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং তাকে মুক্তির কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে রুল জারি করেছে হাই কোর্ট।

এ ছাড়া তাকে যে প্রক্রিয়ায় বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে তা অসাংবিধানিক ও মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থি কেন নয় তাও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।

খোদা বখস চৌধুরী বলেন,একটা আদেশ আদালতের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়েছে।আদালতের মাধ্যমে যখন কাজটা হয় তখন তো আপনাকে আদালতকে জিজ্ঞেস করতে হবে।আর এটা এখন হাইকোর্টে চলে গেছে এখানে আমাদের মন্তব্য করা ঠিক হবে না।”

মেঘনা আলমের গ্রেপ্তার প্রক্রিয়াটা সঠিক হয়নি বলে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল রোববার মন্তব্য করেছেন।এ বিষয়ে খোদা বখস চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে জবাবে তিনি বলেন, “আইন উপদেষ্টা কোন প্রেক্ষিতে এই কথাটি বলেছেন,আমরা জানি না।তিনি আমাদের কাছে এ বিষয়ে কিছু জানতেও চাননি।কাজেই এখন উত্তরটা দিলে তো সঠিক প্রেক্ষাপট আসবে না।এখন বিষয়টি আদালতে চলে গেছে।”

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সরকারী দুজনেই মেঘনা আলামের বিষয়ে প্রশ্ন নিতে অনাগ্রহী ছিলেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধানের দায়িত্ব থেকে অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিককে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ও প্রশ্ন ওঠে সংবাদ সম্মেলনে।মডেল মেঘনা আলমের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে তাকে সরানো হয়েছে এমন আলোচনার বিষয় জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “এগুলো তো রুটিন বিষয়।মেঘনা আলমের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে সরানো হয়নি।উনি হয়তো অসুস্থ আছেন সেজন্য হতে পারে।”

পরে আরেক সাংবাদিক সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আলোচিত এক বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।গত ১০ এপ্রিল সুনামগঞ্জে একটি অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীর আলম বলেন,জনগণ এই সরকারকে ‘পাঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চায়’।

কোন পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ কথাটি বলেছিলেন জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন,“আমি তো বলিনি সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে চায়।এটা জনগণ বলেছে।সরকার তো বলে দিয়েছে,আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। আমি রাজনীতিবিদ নই।আমার এই কথা বলার প্রশ্নই উঠে না।”

অন্তর্বর্তী সরকার জেনারেল ডায়েরি-জিডি ও মামলা (এফআইআর) অনলাইনে নেওয়া শুরু করতে যাচ্ছে জানিয়ে বিশেষ সহকারী খোদা বখস বলেন,প্রথমে দুটি জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইনে জিডি নেওয়া শুরু হবে।পরে এফআইআর নেওয়া শুরু হবে।ধীরে ধীরে একটা স্থায়ী সমাধান হবে।

0Shares

আরও খবর

Sponsered content

0 Shares