সারাদেশ

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে’র বন্ধ হওয়া ১৬টি কারখানা চালুর দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশে যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ

  প্রতিনিধি ২২ জানুয়ারি ২০২৫ , ৫:২১:৩৪ প্রিন্ট সংস্করণ

গাজীপুর প্রতিনিধি।।গাজীপুর নগরের সারাব এলাকার ‘বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে’র বন্ধ হওয়া ১৬টি কারখানা চালুর দাবিতে আবার বিক্ষোভ শুরু করেছেন শ্রমিকেরা। বুধবার বিকেলে শ্রমিকেরা উত্তেজিত হয়ে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে অবস্থান নিয়ে অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাঙচুর করেন। একপর্যায়ে তাঁরা একটি মালভর্তি ট্রাক ও তিনটি বাসে অগ্নিসংযোগ করেন।ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে শ্রমিকদের হামলায় তিন সংবাদকর্মী আহত হন।

শ্রমিকদের অবরোধের কারণে সড়কের উভয় দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।এতে সড়কে চলাচলকারী যান চালক ও যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন।পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে রাত পৌনে আটটার দিকে সড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এ ঘটনার মধ্যে নগরের তেঁতুইবাড়িতে ‘গ্রামীণ ফেব্রিকস’ নামের একটি কারখানার পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় অগ্নিসংযোগ করে উত্তেজিত শ্রমিকদের একটি অংশ।রাত আটটায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছিল।

শিল্প পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,বন্ধ হওয়া ১৬টি কারখানা চালুর দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার গণসমাবেশ করেন কারখানার শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।শ্রীপুরের সান সিটির মাঠে আয়োজিত ওই সমাবেশ থেকে প্রতিষ্ঠানটির ৪২ হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর জীবন-জীবিকার স্বার্থে বন্ধ কারখানাগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হয়।এরই ধারাবাহিকতায় আজ বিকেলে আবার শ্রমিকেরা সানসিটি মাঠে সমাবেশ শুরু করেন।সমাবেশের একপর্যায়ে শ্রমিকদের একটি পক্ষ চক্রবর্তী এলাকায় চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ করে গাছের গুঁড়িতে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকেরা সড়কে চলাচলরত অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাঙচুর করেন।একপর্যায়ে মালবোঝাই একটি ট্রাক ও তিনটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

শ্রমিকদের অবরোধের খবর সংগ্রহ করতে গেলে দীপ্ত টিভির গাজীপুরের প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম,প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার কালিয়াকৈর প্রতিনিধি আবু সাইদ,বাংলা ভিশনের চিত্রসাংবাদিক আমির হোসেনকে বেধড়ক পেটানো হয়।তাঁদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন শ্রমিকেরা।

ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রথমে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।কিন্তু শ্রমিকেরা উত্তেজিত হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন।পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।পরে রাত পৌনে আটটার দিকে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

সন্ধ্যা সাতটার দিকে কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন,শ্রমিকদের একটি পক্ষ চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ করে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে তাঁরা সড়কে যানবাহন ভাঙচুর শুরু করে।এ সময় কিছু দুষ্কৃতকারী একটি ট্রাক ও তিনটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পরে রাত আটটার দিকে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আবু তালেব বলেন,আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি।এখন যান চলাচল স্বাভাবিক আছে।শ্রমিকেরা বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর করেছেন।কয়েকটিতে অগ্নিসংযোগ করেছেন।ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন আছে।’

এদিকে চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে দেওয়ার মধ্যে নগরের তেঁতুইবাড়িতে ‘গ্রামীণ ফেব্রিকস’ নামের একটি কারখানায় আগুন দেয় শ্রমিকদের একটি পক্ষ।খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়।রাত আটটায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছিল।

ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা প্রণব চৌধুরী আগুন লাগার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন,শ্রমিকেরা পাঁচতলা ভবনের নিচতলা অগ্নিসংযোগ করেছে।ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

প্রসঙ্গত,গত ১৫ ডিসেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বেক্সিমকোর শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের কমিটির সভার সিদ্ধান্তের পর বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।বন্ধের কারণ হিসেবে সরকার জানায়,কারখানাগুলোতে ক্রয়াদেশ না থাকা ও ব্যাংকে ঋণখেলাপি থাকায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না।

আরও খবর

Sponsered content