রাজনীতি

বিএনপি’র বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশ বন্ধে ব্যাপক তৎপরতা শুরু!

  প্রতিনিধি ৩১ অক্টোবর ২০২২ , ১০:৫৫:৫১ প্রিন্ট সংস্করণ

বরিশাল প্রতিনিধি।।আর মাত্র ৪ দিন বাকি সমাবেশের। খুলনা, রংপুরের মতো ঠিক এবার একইভাবে বিএনপি’র বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশ বন্ধে ব্যাপক তৎপরতা শুরু হয়েছে। ৫ নভেম্বরের সমাবেশকে সামনে রেখে আগেই ৪ঠা নভেম্বর থেকে বাস ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। লঞ্চ ধর্মঘটেরও ঘোষণা সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবে সিএনজি, অটোরিকশা বন্ধের নির্দেশের ঘটনাটি বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে অনেকের মাঝে। শুক্রবার অটো, সিএনজি মালিকদের কাছে ৪ ও ৫ নভেম্বর ধর্মঘটের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাস মালিকদের দৌরাত্ম্য বন্ধ, সহজ শর্তে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান, গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি ইত্যাদি। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন বরিশাল জেলা অটোরিকশা সমিতির সভাপতি কামাল হোসেন লিটন মোল্লা এবং সাধারণ সম্পাদক মো. মুশফিকুর রহমান।

এ ব্যাপারে থ্রি হুইলার শ্রমিক সংগঠনের অন্যতম নেতা ডা. মনিষা চক্রবর্তী জানান, এ ধরনের কোনো নির্দেশ আমাদের সংগঠন থেকে যায়নি। এটি সম্ভবত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। শ্রমিকরা এ সিদ্ধান্ত মানবে কিনা সেটাই বিবেচ্য বিষয়।

এদিকে ৪ ও ৫ নভেম্বরে বরিশালের সকল আবাসিক হোটেলের বুকিং নেওয়া বন্ধ রয়েছে। বলা হচ্ছে ওই ২ দিনের কোনো সিট খালি নেই। দাবি করা হচ্ছে বিএনপি’র সমর্থকরা আগেভাগে হোটেল বুকিং করেছেন। কিন্তু বাস্তবে এর সত্যতা মেলেনি।

সূত্রের দাবি, তাদেরকেও ওই দু’দিনের বুকিং না দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

নগরীর হোটেল আলভির ব্যবস্থাপক মো. সোহরাব জানান, তার হোটেলে ওই দু’দিনের জন্য সব সিট অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। অগ্রিম বুকিংয়ের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব নিয়মকানুন মানা হচ্ছে। তবে এসব করেও বরিশালে বিএনপি’র সমাবেশে জনসমাগম বন্ধ করা যাবে না বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবিরের মতে বর্তমান সরকারের দুঃশাসনের প্রতিবাদে দেশব্যাপী যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে তার প্রতিফলন ফুটে উঠেছে বিএনপি’র মহা সমাবেশে। কোনো বাধাই মানুষকে আটকে রাখতে পারছে না। ইনশাআল্লাহ বরিশালের সমাবেশও হবে স্মরণকালের বৃহত্তম সমাবেশ।

এদিকে বরিশাল বিভাগীয় মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে অনেক দিন পরে বরিশাল বিএনপি অফিস নেতাকর্মীদের উপস্থিতে মুখর হলেও সবার মধ্যে এখনো অনেক অনিশ্চয়তা কাজ করছে। দক্ষিণাঞ্চলের অন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এ মহাসমাবেশকে সফল করতে নানামুখি প্রস্তুতি চলছে।

ইউনিয়ন থেকে গ্রাম পর্যায়েও কর্মীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দের। মহাসমাবেশের দিন ও আগের দিন বরিশালে সড়ক পরিবহন ধর্মঘট আহবান করা হয়েছে ইতিমধ্যে। যা আজকালের মধ্যে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলেও ছড়িয়ে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নৌ ধর্মঘট আহবানেরও গুঞ্জন রয়েছে। এমনকি ভোলা ও বরিশালের মধ্যবর্তী তেতুলিয়া নদীতে সরকারী ফেরি সার্ভিসসহ নৌকায় যাত্রী পারাপার বন্ধের অঘোষিত পদক্ষেপ নেয়া কথাও শোনা যাচ্ছে।

এরফলে নদ-নদী নির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে বরিশাল মহানগরীর সমাবেশ স্থলে পৌঁছানো কঠিন হবে। তারপরেও নেতাকর্মীদের আটকানো যাবেনা বলে দাবী করছেন বিএনপি নেতারা। তবে যে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচীতে এধরনের বাধা বিপত্তি বিরোধী দলের প্রতি জন সমর্থন বৃদ্ধিতেই সহায়ক হয় বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

এদিকে আগামী ৫ নভেম্বর শনিবার বরিশালে মহাসমাবেশের স্থান এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বিএনপির পক্ষ থেকে নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যান বা বেলসপার্ক সমাবেশের জন্য অনুমোদন চাওয়া হলেও প্রশাসন থেকে ফজলুল হক এভিনিউ বা আউটার স্টেডিয়ামকে বেছে নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু বিএনপি নেতৃবৃন্দ এখনো বেলস পার্ককেই প্রথম পছন্দের তালিকায় রেখেছেন।

বিষয়টি নিয়ে বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সোহেল মারুফ বলেন, এ বিষয়ে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে। বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জনসভা করার অনুমতি দেওয়া হতেও পারে। তবে এখনও সিদান্ত হয়নি। মঙ্গলবারের মধ্যেই স্থান নির্বাচন চূড়ান্ত করে প্রচারণায় নামতে চাচ্ছে বিএনপি। মহাসমাবেশকে ঘিরে পুলিশ নেতাকর্মীদের প্রতি কোন হয়রানীমূলক আচরণ করছে কিনা সে দিকেও লক্ষ্য রাখছে দলটি। পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র থেকে আইন অনুযায়ী কাজ করার কথা বলা হয়েছে।

অপরদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি শাসক দলের পক্ষ থেকে এ মহাসমাবেশ প্রতিহত করতে পরিবহন ধর্মঘট ছাড়াও রাজনৈতিক পদক্ষেপের বাইরে শক্তি প্রয়োগের মত পরিস্থিতি তৈরী করা হয় কিনা সে বিষয়েও লক্ষ্য রাখছে বিএনপি।

তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ‘বিরোধী দলের কোন কর্মসূচীকে তারা দলীয়ভাবে প্রতিহত বা বাধাগ্রস্ত করবেন না’। বিএনপি যদি কোন অরাজক পরিস্থিতি তৈরী করে, তবে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চয়ই প্রতিহত করবে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র।

আরও খবর

Sponsered content