অপরাধ-আইন-আদালত

বালুখেকো সেলিম খানকে দীপু মনি আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন?

  প্রতিনিধি ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৪:১১:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি নিশ্চুপ।বালুখেকো সেলিম খানকে তিনি আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন।স্পষ্ট-ইঙ্গিতে এই অভিযোগ খোদ নদী রক্ষা কমিশন চেয়ারম্যানের।তবে এখনো কোনো কথা বলেননি দীপু মনি।তার বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করলেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।এমনকি অন্য গণমাধ্যমকেও তিনি এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেননি।

দীপু মনিকে নিয়ে আলোচনার শুরু জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীর এক বক্তব্য ঘিরে। রবিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি ‘চাঁদপুরের এক নারী মন্ত্রী নদী দখলে সহায়তা করেন’ বলে অভিযোগ করেন।

অর্থাৎ নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে স্পষ্ট ইঙ্গিত করে অভিযোগ তুলেছেন।এরপরেই নতুন করে আলোচনায় চাঁদপুরের ‘নদীখেকো’ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সেলিম খান।যিনি দীপু মনির ঘনিষ্ঠ বলে সব মহলেই প্রচার আছে।

আসলেই কি সেলিম খানের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা দীপু মনি?এর কি কোনো জবাব নেই মন্ত্রীর কাছে?তিনিই কি সেলিমকে প্রশ্রয় দিয়ে মেঘনার বালু তুলে চাঁদপুরকে ঝুঁকির মুখে ফেলছেন?নদী দখলে মন্ত্রীর সহায়তা দেওয়ার অভিযোগই বা কতটা সত্যি?এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নদী দখলদারদের পেছনে দীপু মনির নাম আসার পর।তবে নীরব মন্ত্রী। নিরুত্তর।

নদী কমিশনের চেয়ারম্যান এও বলেনমেঘনা নদীতে বালু উত্তোলন বন্ধ করায় সরকারি কর্মকর্তাদের ওই মন্ত্রী শাস্তি দিয়েছেন।’

‘মেঘনায় এর আগে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছে।যাদের নেতৃত্বে এই কাজ বন্ধ করা হয়েছে,তাদের (সরকারি কর্মকর্তাদের) পরে পানিশমেন্ট (শাস্তি) হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো (বদলি করা) হয়েছে।স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন,আবার সেখানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে।ভূমিকা রয়েছে একজন নারী মন্ত্রীর।এই হায়েনার দল থেকে নদীকে বাঁচানো যাচ্ছে না।এই হায়েনার দলের পেছনে আছে রাজনৈতিক শক্তি।চাঁদপুরের ওই নারী মন্ত্রী তাদের সহায়তা করেন।’

নদী কমিশনের চেয়ারম্যান এমন বক্তব্যের পর আলোচনা ওঠে সংশ্লিষ্ট মহলে।দীপু মনির সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসে বিতর্কিত সেলিম খানের নামও।এ বিষয়ে দীপু মনির প্রতিক্রিয়া জানতেও তৈরি হয়েছে কৌতূহল।

চাঁদপুর সদরের লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খান বালুখেকো হিসেবে পরিচিত।মেঘনার বালি অবৈধভাবে উত্তোলন করে সেই ‘সামান্য’ সেলিম খান এখন হাজার কোটি টাকার মালিক।জালিয়াতিসহ নানা অপরাধের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারেও ছিলেন তিনি।পরে তিনি জামিনে বের হয়ে ফের মেঘনা থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন শুরু করেন।

নদী কমিশনের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে,নদী কমিশন স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় মেঘনা থেকে সেলিম খান সিন্ডিকেটের বালু উত্তোলন বন্ধ করে।এর প্রতিশোধ নেন মন্ত্রী দীপু মনি। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পানিশমেন্ট (শাস্তিমূলক) বদলি করেন ক্ষমতার অপব্যবহার করে।

আর সেলিম খান জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ফের মেঘনা থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন চলছে।এ অবস্থায় মন্ত্রীর ক্ষমতায় ক্ষমতাবান অবৈধ টাকার মালিক সেলিম খানের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে নদী কমিশন।

জানা গেছে,সেলিম খান আবারও বেআইনিভাবে বালু উত্তোলনে নেমেছেন।চাঁদপুর সদরসংলগ্ন মেঘনা নদীর একাধিক স্থান থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করছে তার দলবল।গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে রাতের অন্ধকারে তিনি এ কাজ করছেন।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী,চাঁদপুর জেলায় কোনো বালুমহাল নেই। ফলে সেলিম খানের বালু উত্তোলনে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ও চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের কোনো অনুমতিও নেই।

নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়,সেলিম খানের লোকজন রাত ১১টার পর থেকে মেঘনায় তিনটি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে।বালু উত্তোলনের কাজ চলে রাত ৪-৫টা পর্যন্ত। রাত পোহানোর আগেই ড্রেজারগুলো গোপন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।

স্থানীয়রা জানান,লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে প্রস্তাবিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের পশ্চিম পাশে অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু মজুত রাখা হচ্ছে।এ ছাড়া চাঁদপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব-দক্ষিণ দিকে ঢালীর ঘাটেও বালু সংরক্ষণ করা হয়।এখানে সেলিম খানের সহোদর টেলু খানের বালু বিক্রির জায়গা রয়েছে।এখান থেকে প্রতিদিন অবাধে বালু বিক্রি করা হচ্ছে।এই বালু কোথা থেকে আসছে স্থানীয় প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা হচ্ছে না।

সেলিম খান সম্প্রতি দুদকের মামলায় জেল খেটে বের হওয়ার পর কিছুদিন চুপচাপ ছিলেন।এরপর আবারও বালু উত্তোলনের কাজ শুরু করেন।দীর্ঘদিন চাঁদপুরসংলগ্ন পদ্মা ও মেঘনার ৭০ কিলোমিটার এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিপুল অর্থকড়ি কামিয়ে নিয়েছেন বহিষ্কৃত এই আওয়ামী লীগ নেতা।

এদিকে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত সেলিম খানের ৩০০ ড্রেজার জব্দ করেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন।

আরও খবর

Sponsered content