সারাদেশ

ফল বিক্রেতা জিয়াউল হক হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক!

  প্রতিনিধি ৮ এপ্রিল ২০২৩ , ২:০৬:০২ প্রিন্ট সংস্করণ

সিলেট প্রতিনিধি।।সুনামগঞ্জের আলোচিত ব্যবসায়ী জিয়াউল হক।তার বাবা একসময় পান-বিড়ি বিক্রি করতেন।তারপর শুরু করেন ফল বিক্রি।তার বাবার পরে এ ব্যবসায় করতেন সে। ভূমি দখল,নদ-নদীর বালু ও পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন ও বিক্রি করে সম্পত্তির পাহাড় গড়ে তুলেছেন।এছাড়া অবৈধভাবে খাল বিল দখল করারও অভিযোগ আছে।এক সময় ফল বিক্রি করলেও এখন তিনি সুনামগঞ্জের বড় ব্যবসায়ী,হাজার কোটি টাকার মালিক।

বিভিন্ন নদ-নদীর বালু পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন,ভূমি দখল ও অবৈধভাবে সম্পত্তি গড়ে তোলায় সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকে অভিযোগ করেছেন।

এলাকাবাসী জানান,জিয়াউল হকের বাবা একসময় পান-বিড়ি বিক্রি করতেন।তারপর শুরু করেন ফল বিক্রি।তার বাবার পরে তিনি এ ব্যবসায় করতেন।ফল ব্যবসার সঙ্গে সুদে টাকা লাগাতে শুরু করেন তিনি।সেই জিয়াউল হক এখন হাজার কোটি টাকার মালিক।কিভাবে রাতারাতি হলেন এত সম্পত্তির মালিক এবং সুনামগঞ্জের এই ব্যবসায়ী,তা নিয়ে সুনামগঞ্জবাসীর মধ্যে আলোচনা এখন তুঙ্গে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,জিয়াউল হক গড়ে তুলছেন শহরতলীর সার্কিট হাউজের সামনে সুইমিংপুলসহ বিলাসবহুল বাড়ি। যার মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা।ওয়েজখালিতে একটি বাগানবাড়ি রয়েছে-যার মূল্য আনুমানিক ৫ কোটি টাকা।মধ্যবাজারে হক আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট,পানামা আবাসিক হোটেল,সাধনা বিপনি বিতান, সুনামগঞ্জ সদরে তেথুরিয়া লক্ষণ সিড়ি মৌজা,সদরে নিশ্চিন্তপুর মৌজা,ছাতক উপজেলার জাউয়া মৌজাসহ প্রায় তিনশত বিঘা জমিসহ আরও বিপুল পরিমাণ নামে-বেনামে সম্পদ রয়েছে তার।

জিয়াউল হকের উত্থান;-

বিএনপি–জামায়াত জোট সরকারের সময়।ওই সময় সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটিতে স্থান করে নেন জিয়াউল হক।তার সদস্য নম্বর ছিল ১৫৮।একই কমিটিতে স্থান পান তার বড় ভাই রেজাউল হক স্বেচ্ছাসেবক বিষয় সম্পাদক,তার মামা কোষাধ্যক্ষ শামছুল ইসলাম,ভগ্নিপতি অধ্যক্ষ শের গুল আহমদ সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক, ৭২নং সদস্য তার বাবা নুরুল হক।এই কমিটির সভাপতি সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি নাজির হোসেন।

বিএনপির পরিবার হওয়ার সুবাদে সে সময় জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য করা হয় নুরুল হককে।সে থেকেই হাওর-বিল থেকে বালুমহাল,শ্মশান থেকে সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখল ছাড়াও খাদ্য গুদামে ধানচাল সরবরাহসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য করে টাকা বানাতে শুরু করেন। কিন্তু সরকার পাল্টালেও তার প্রভাব কমেনি।২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের এক এমপিকে তার ব্যবসার পার্টনার করে নতুন করে ব্যবসা শুরু করেন জিয়াউল হক।এরপর থেকে জিয়াউল হককে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এই এমপির ক্ষমতা ব্যবহার করে সকল অপকর্ম করে যাচ্ছে। কৃষকদের নামে-বেনামে গুদামে ধান সরবরাহ,চালের সিন্ডিকোট করার অপরাধে বিভিন্ন সময় এলাকাবাসী অভিযোগ দিলেও তিনি থাকেন ধরাছোড়ার বাইরে।

স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা বলেন,অবৈধ টাকার জোরে গড়ে তুলেছেন সন্ত্রাসী বাহিনী।এদের ভয়ে মুখ খোলার সাহস পান না কেউ।জিয়াউল হক তার সিন্ডিকেট ও সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে।এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বালুমহালে চাদাবাজি ও হিন্দুদের জায়গা দখল করে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজের নামে দলিল করি নিয়েছেন।এই নিয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন বলেন,এক সময় জিয়াউল হক ছিলেন বিএনপির নেতা।এখন তিনি আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সংখ্য গড়ে বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও এমপির সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন তিনি।

দুদকে দেওয়া লিখিত অভিযোগে যা বলা হয়েছে:-

জোয়াল ভাংগার হাওর, লাইয়া গজারিয়া গ্রুপ জলমহাল, করচা নদী গ্রুপ ও ছনুয়া বনুয়া বিল।এই বিলগুলোর অবস্থান সুনামগঞ্জ সদর থানায়।বগিয়াদী গ্রুপ জলমহাল ও সোনাতলা বিল দুটির অবস্থান তাহিরপুর উপজেলায়।এ বিলগুলো স্থানীয় মৎস্যজীবী সংগঠনের মৎস্য শিকারিদের দিয়ে প্রথমে লিজের আবেদন করান জিয়াউল হক।লিজের পর নিয়ন্ত্রণ নেন তিনি। এদিকে,জিয়াউল হক কৌশল করে কৃষকদের রক্ত শোষণ করে যাচ্ছেন। কৃষকদের জীবন মান উন্নয়ন,কৃষি উন্নয়নে সহায়তা ও হাওরের প্রান্তিক কৃষকদের উৎপাদন এবং ভর্তুকির অংশ হিসাবে সরকার প্রতি বছর হাওরের প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে বাজার মূল্যের দ্বিগুণ দামে ধান ও চাল ক্রয় করে থাকেন।কিন্তু সরকারের দ্বিগুণ মূল্যে ক্রয় করা ধান চাল সংগ্রহের অভিযান বঞ্চিত হচ্ছে জিয়াউল হকের কারণে। আলোচ্য জিয়াউল প্রভাবশালী একটি মহলের অনুকূল্যে নিয়ে সিন্ডিকেট করে কৃষকদের নামে জেলার সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর,তাহিরপুর,জামালগঞ্জ,ধর্মপাশা, মধ্যনগর, দ. সুনামগঞ্জ ও দোয়ারাবাজার খাদ্যগুদামে নামে-বেনামে ধান ও চাল সরবরাহ করে যাচ্ছেন।জিয়াউল হকের এসব অবৈধ কাজে বাধা দেওয়ায় প্রতিপক্ষ হন বাধা দানকারীরা।সম্প্রতি মসজিদের উন্নয়নের নামে বালু-পাথর চুরির উদ্দেশ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব জসিমউদদীন পাটোয়ারী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি আনেন জিয়াউল হকের সিন্ডিকেট সদস্য বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ভাদেরটেক গ্রামের তৈয়বুর রহমান।এ চিঠির বলে ধোপাজান নদী থেকে বালু-পাথর উত্তোলন করার জন্য সদর থানার প্রশাসনকে চাপ দেন।এই চিঠির বৈধতার প্রশ্নে সুনামগঞ্জের ডিসির কাছ থেকে লিখিত অনুমতি আনতে বলেন। এতে জিয়াউল হক ক্ষিপ্ত হন।

এ বিষয়ে জিয়াউল হককে একাধিকবার ফোন কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

আরও খবর

Sponsered content