ব্যবসা ও বাণিজ্য সংবাদ

প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে পেঁয়াজের দাম -৮৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে!

  প্রতিনিধি ৩ জুন ২০২৩ , ১২:৪১:৪৯ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে পেঁয়াজের দাম। ্নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দামের ঊর্ধ্বগতির লাগাম যেন কোনোভাবেই টেনে ধরা যাচ্ছে না।এতে বাজার করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের।ব্যবসায়ীদের দাবি,চাহিদার তুলনায় বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহের ঘাটতি থাকায় দাম বাড়ছে।

পেঁয়াজ আমদানি করা ছাড়া এর দাম আর কমবে না।বরং সামনের দিনগুলোতে দাম আরও বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা।

তবে ক্রেতারা বলছেন,বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই।ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র অসাধু ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুদ করে দাম বাড়িয়েছেন।সরকারের তদারকির অভাবে সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

শনিবার (৩ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়,পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে।দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি আছে অবৈধভাবে আসা ভারতীয় পেঁয়াজও।তারপরও দুই মাসের ব্যবধানে প্রায় তিনগুণ হয়েছে পেঁয়াজের দাম।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে বাজারে মানভেদে ফরিদপুরের পেঁয়াজের পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা,যা কেজিতে পড়ছে ৮০ থেকে ৮৪ টাকা। পাবনার পেঁয়াজের পাল্লা বিক্রি হচ্ছে ৪২০ থেকে ৪৩০ টাকা, কেজিতে যা পড়ছে ৮৪ থেকে ৮৬ টাকা।আর রাজশাহীর পেঁয়াজের পাল্লা বিক্রি হচ্ছে ৪২০ টাকা,যা কেজিতে ৮৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।এছাড়া অবৈধভাবে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৪ টাকায়।

অথচ দুই মাস আগেও কারওয়ান বাজারে মানভেদে প্রতি পাল্লা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ১৫০ থেকে ১৭৫ টাকা।কেজির হিসেবে যা পড়েছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়।দুই মাসের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম বেড়েছে প্রায় তিনগুণ।

পেঁয়াজের এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে পাইকারি বিক্রেতা আব্দুল হালিম বলেন,কাঁচামালের দামের কোনো ঠিক নেই।সকালে এক দাম থাকে তো বিকেলে আরেক দাম।এবার পেঁয়াজের উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহের ঘাটতি রয়েছে। তাই দাম বেশি।

ফরিদপুরের হাঁট থেকে পেঁয়াজ কিনে আনা এই ব্যবসায়ী আরও বলেন,আজকে ফরিদপুর থেকে প্রতি মণ (৪০ কেজি) পেঁয়াজ কিনেছি ৩ হাজার ১০০ টাকায়।কেজি হিসেবে দাম পড়েছে সাড়ে ৭৭ টাকা।এরপর পরিবহন,লেবার ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজিতে আরও ৪ টাকা যোগ হয়।বাজার পর্যন্ত আসতেই প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ে সাড়ে ৮১ টাকা।তাহলে এই পেঁয়াজ বিক্রি করব কত? আমরা হাঁট থেকে যে দামে পেঁয়াজ কিনে আনি তার থেকে ১-২ টাকা লাভে বিক্রি করি।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী উৎপাদন ও মজুদ মিলিয়ে বাজারে পেঁয়াজের সংকট থাকার কথা নয়।তারপরও বাজারে পেঁয়াজের সংকট কেন জানতে চাইলে আব্দুল হালিম বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদন হলেও নানা করাণে নষ্ট হয়েছে।এছাড়া কোনো কৃষক হয়তো ৫০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন করেছে।কিন্তু সে একসাথে সব পেঁয়াজ বিক্রি করে না।কারণ এখন সব বিক্রি করে দিলে সারা বছর কী করবে?তাই তার প্রয়োজন অনুযায়ী দুই মণ বা তিন মণ বিক্রি করে।আমদানি করা ছাড়া পেঁয়াজের দাম কমবে না,বরং আরও বাড়বে বলে জানান এই ব্যবসায়ী।

নুরুল ইসলাম নামের আরেক বিক্রেতা বলেন,হাটেই পেঁয়াজের দাম বেশি।আজকে কারওয়ান বাজারে যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছি,কাল হাটে গিয়ে দেখব এর থেকে বেশি দাম।তখন আমাদের তো বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে।হাটে কৃষকদের কাছে দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তারা বলে,এবার উৎপাদন কম হয়েছে।আগে যেখানে প্রতি বিঘায় ৫০ থেকে ৬০ মণ পেঁয়াজ হতো,এবার সেখানে নাকি ৩০ থেকে ৪০ মন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে।

তিনি আরও বলেন,কৃষক পর্যায়েই পেঁয়াজের দাম বেশি। কিন্তু বাজারে আমাদের সাথেই ক্রেতারা ঝগড়া করে।দাম কমলে এই অশান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।তবে আমদানি করা ছাড়া পেঁয়াজের দাম কমবে না।বরং এই সপ্তাহেই পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

একই ইঙ্গিত দিয়েছেন পাইকারি বিক্রেতা মজনু মিয়া।তিনি বলেন,লোকমুখে শুনছি,শ্যামবাজারে নাকি আজকে ৯২ টাকা করে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।তাহলে আগামীকাল কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আমদানি করা ছাড়া পেঁয়াজের দাম কমবে না।

পেঁয়াজের এমন আকাশছোঁয়া দামের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। তাদের দাবি,ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট, অবৈধ মজুদ ও সরকারের তদারকির অভাবে পেঁয়াজের বাজার এমন অস্থির হয়ে উঠেছে।এতে ভুক্তভোগী শুধু সাধারণ ক্রেতারাই।

কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আব্দুর রহিম বলেন,বাজারে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই বলেই পেঁয়াজের দাম এমন অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। মাঝে সরকার যখনই বাইরে থেকে পেঁয়াজ আমদানির কথা বলেছিল,তখনই কেজিতে ৪-৫ টাকা দাম কমেছে।আমদানি না করায় এখন আবার বেড়েছে।সরবরাহের ঘাটতি নেই। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করেই ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুদ করে দাম বাড়িয়েছে।এখন সরকার যদি আমদানি শুরু করে তাহলে মজুদ করা পেঁয়াজ বের হয়ে আসবে,দামও কমবে।

পেঁয়াজের দাম না কমার পেছনে সাধারণ মানুষেরও দায় আছে জানিয়ে তিনি বলেন,আমাদের সাধারণ মানুষের মধ্যে ইউনিটি নেই।আমরা যদি সবাই পেঁয়াজ কেনা কয়দিন বন্ধ রাখি,তাহলে এমনিতেই পেঁয়াজের দাম কমে যাবে।কারণ পেঁয়াজ মজুদ করে রাখলে তো নষ্ট হয়ে যাবে।কিন্তু আমরা সেটি করি না,বরং দাম বাড়ার কথা শুনলে এক কেজির জায়গায় পাঁচ কেজি কিনে সংকট তৈরি করি।

একই কথা বলেছেন পেঁয়াজ কিনতে আসা গৃহিণী মরিয়ম বেগম।তিনি বলেন,আমরা ১৫ লাখ মানুষ যদি একসঙ্গে রাস্তায় নামি,তাহলে দাম কমতে বাধ্য।শুধু একজনের কথা বলে কোনো লাভ নেই।কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের এক দাম,তো ফরিদপুরে আরেক দাম।দামের এত হেরফের কেন হবে? বাজেটে এসব বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি।

বেসরকারি চাকরিজীবী কবির হোসেন বলেন,শুধু পেঁয়াজ নয়,নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।এতে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা হচ্ছে,তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।এভাবে চলতে থাকলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের বাঁচার উপায় থাকবে না।আত্মহত্যা করতে হবে!

বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহের ঘাটতি নেই দাবি করে তিনি বলেন,টাকা দিলে তো পেঁয়াজ ঠিকই পাওয়া যাচ্ছে।তাহলে ঘাটতি হলো কীভাবে?মূলত ভোক্তা অধিদপ্তরসহ সরকারের তদারকি সংস্থাগুলোর তদারকি ও আন্তরিকতার অভাবেই বাজারের এই অবস্থা।তাদের উচিত সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় হওয়া।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে,চলতি বছর ২ লাখ ৪১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করার পর উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টন।প্রতিকূল আবহাওয়াসহ নানা কারণে প্রায় ৩৫ শতাংশের মতো পেঁয়াজ নষ্ট হলেও বর্তমানে মজুদ আছে প্রায় ১৮ লাখ টন।সে হিসেবে পেঁয়াজের সংকট হওয়ার কথা নয়,তবুও এক মাসের ব্যবধানে বাজারে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে কেজি প্রতি ৮০ টাকা ছাড়িয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content