অপরাধ-আইন-আদালত

পাঁচ সংসদ সদস্যের সবার অনুসন্ধান এখনো শেষ হয়নি-দুদক

  প্রতিনিধি ২৩ জুন ২০২৩ , ৪:০১:০৭ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিনিধি।।অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাঁচজন সংসদ সদস্যকে অনুসন্ধানের জালে আনলেও ‘কিছু’ পাচ্ছে না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতিমধ্যে দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানের ইতি টেনে তাঁদের অব্যাহতি দিয়েছে।দুদকের একাধিক সূত্র বলেছে, কার্যত থমকে থাকা বাকি তিনজনের অনুসন্ধানও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই শেষ করা হবে।পরিসমাপ্তির (অভিযোগ থেকে মুক্তি) জন্য চাপও রয়েছে।তবে দুদকের সচিব বলেছেন,অনুসন্ধান শেষ না হলে কিছুই বলা যাবে না।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্যাসিনোবিরোধী ও শুদ্ধি অভিযানের পর অক্টোবরে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। রাজনীতিবিদ,ব্যবসায়ী,ঠিকাদারসহ প্রায় ২০০ জনের বিরুদ্ধে ছিল এমন অভিযোগ।তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের পাঁচ সংসদ সদস্যও ছিলেন।তাঁরা হলেন সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ আসনের এমপি সামশুল হক চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বাবু,সুনামগঞ্জ-১ আসনের মোয়াজ্জেম হোসেন রতন,ভোলা-৩ আসনের নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এবং বরিশাল-৪ আসনের পঙ্কজ দেবনাথ।অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠা অন্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কার্যক্রম দ্রুত শেষ হলেও পাঁচ সংসদ সদস্যের সবার অনুসন্ধান এখনো শেষ হয়নি।

দুদকের সূত্র জানায়,হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে জুয়া ও ক্যাসিনো ব্যবসা,চাঁদাবাজি,মাদক ও তদবির-বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা অর্জনের অভিযোগ পেয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

তবে প্রায় সাড়ে তিন বছর পর সংস্থাটি গত ৮ মে অনুসন্ধান পরিসমাপ্তি ঘোষণা করে তাঁকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়।দুদকের সচিব মাহবুব হোসেনের স্বাক্ষর করা প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি জানানো হয়।এ প্রসঙ্গে সামশুল হক চৌধুরী বলেন, ‘দুদক সঠিক তদন্ত করে কিছু পায়নি।এ জন্য দুদককে সাধুবাদ। অনুসন্ধান হলেই ফলাও করে প্রচার হয়। এতে সম্মানহানি হয়। আমি কোনো অন্যায় করিনি।যারা অভিযোগ দিয়েছে, আল্লাহ তাদের হেদায়েত দান করুন।’

নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধেও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আসে দুদকে।সূত্র বলেছে,এই অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু হয়ে পরে থেমে যায়।গত বুধবার তিনি বলেন, তিনি দুদক থেকে ‘ক্লিন সার্টিফিকেট’ পেয়েছেন। অভিযোগ পরিসমাপ্তি করে ১২ জুন তাঁকে চিঠি দিয়েছে দুদক।তিনি বলেন, ‘আমার বাপ-দাদার সম্পত্তি ছাড়া কিছু নেই।ইকবাল নামের এক ব্যক্তি রাজনৈতিকভাবে হয়রানির উদ্দেশ্যে আমার নামে দুদকে অভিযোগ দিয়েছে। সে নিজেও দুদকের আসামি।’

গত ১১ মে সংবাদ সম্মেলনে দুদক সচিব বলেছিলেন, অভিযোগ পরিসমাপ্তি মানে একেবারেই শেষ নয়।ভবিষ্যতে কমিশন মনে করলে আবারও অনুসন্ধান শুরু হবে।

মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বিরুদ্ধে দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়,তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম, দুর্নীতি, সরকারি সম্পত্তি বেদখল,হাওরে বালু-পাথর উত্তোলন ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ২০২০ সালে তিনি তলব নোটিশ পেয়ে দুদকে গিয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।

বুধবার তিনি বলেন, ‘আমাকে দুদক থেকে আর কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি।আমি হলুদ সাংবাদিকতার শিকার।’
অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাসিনো ব্যবসা করে বিদেশে টাকা পাচার এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পেয়ে ২০১৯ সালের অক্টোবরে এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধানের স্বার্থে সংস্থাটি তাঁর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও দেয়। তবে তা আদালতে টেকেনি। অভিযোগ অনুসন্ধানের বিষয়ে জানতে মোবাইলে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।

দুদকের সূত্র জানায়, পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এসেছে।এর মধ্যে রয়েছে ঢাকায় ১০ তলা বাড়ি, ফ্ল্যাট, পরিবহন ব্যবসায় বিনিয়োগ,কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি এবং ভারতে বিনিয়োগ।২০১৯ সালে তাঁর দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল।দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।

দুদকের একটি সূত্র বলেছে,তিন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ বর্তমানে কার্যত ফাইলবন্দী।অনুসন্ধান শেষ করে দ্রুত পরিসমাপ্তির ব্যাপারে দুদকের ওপর চাপ রয়েছে।ইকবাল মাহমুদ দুদকের চেয়ারম্যান থাকাকালেই এমপিদের ‘ছাড়’ দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় উঠেছিল।চাপ উপেক্ষা করে দুদক কর্মকর্তারা অনুসন্ধান চালালেও একপর্যায়ে থেমে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেন, শুদ্ধি অভিযানের পর অন্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অনুসন্ধান কার্যক্রম দ্রুত শেষ হলেও এমপিদের অনুসন্ধান শেষ হচ্ছে না।দীর্ঘ দিন ঝুলে থাকলেও কমিশন এ বিষয়ে এখনো দিকনির্দেশনা দেয়নি। শোনা যাচ্ছে সংসদ নির্বাচনের আগেই অভিযোগের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হবে।

অনুসন্ধান বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন,সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান এখনো শেষ হয়নি। কর্মকর্তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন,কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে যদি অভিযোগের সত্যতা না পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা যায়। তবে আলোচিত ঘটনার আলোকে অনুসন্ধানে ব্যক্তি কিংবা অবস্থান বিবেচনা করে ছাড় দেওয়া হলে দুদকের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

আরও খবর

Sponsered content