ব্যবসা ও বাণিজ্য সংবাদ

দাম এক মাসে দ্বিগুণ,পেঁয়াজ আমদানির সুপারিশ

  প্রতিনিধি ১৯ মে ২০২৩ , ২:০৩:৫৯ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।চিনি,পেঁয়াজ ও সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে অস্বস্তিতে সরকার।একশ্রেণির ব্যবসায়ী যৌক্তিক দামের চেয়ে বেশি দামে তেল ও চিনি বিক্রি করছেন বলে খোদ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি অভিযোগ তুলেছেন।আর পেঁয়াজের দাম এক মাসে বেড়ে গেছে দ্বিগুণের বেশি।টিপু মুনশি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির হুমকি দেওয়ার পরও দাম কমছে না।

এমন বাস্তবতায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দ্বারস্থ হয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)।সয়াবিনে এতদিন বিভিন্ন পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) অব্যাহতি থাকলেও ৩০ এপ্রিলের পর থেকে তা আর নেই।বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ১১ এপ্রিল সয়াবিনে ভ্যাট–অব্যাহতি সুবিধা অন্তত ৩০ জুন পর্যন্ত রাখার অনুরোধ জানালেও এনবিআর তা আমলে নেয়নি।ফলে বাজারে সয়াবিন বেচাকেনা হচ্ছে এখন ১৯৫ থেকে ১৯৯ টাকা লিটার দরে,দুই সপ্তাহ আগেও যা ছিল ১২ টাকা করে কম।

নতুন করে গত বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চিনিতে শুল্কছাড়ের যৌক্তিকতা তুলে ধরে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমকে চিঠি দিয়েছে।এ ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সীমিত পর্যায়ে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিতে কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তারকে চিঠি দিয়েছে ১৪ মে।কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোনো চিঠিরই জবাব পায়নি।

* খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম এক মাস আগেও ছিল ৩০ টাকা,বর্তমানে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। * বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি।

বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পাম তেল আমদানিতে ভ্যাট–অব্যাহতির সময় বাড়েনি।তারপরও আমরা চিনির শুল্কছাড়ের মেয়াদ বাড়াতে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেছি।আর পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগের বিষয়েও অনুরোধ করেছি কৃষি মন্ত্রণালয়কে।’

চিনির সরবরাহ ও দাম অস্থিতিশীল:-

স্থানীয় বাজারে চিনির দামে স্থিতিশীলতা আনতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি চিনির ওপর আরোপিত আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে।পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ২৫ শতাংশ।এ তথ্য উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে,আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বাড়ায় দেশীয় বাজারে চিনির সরবরাহ ও মূল্য অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। সরবরাহ স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে শুল্কছাড়ের সুবিধার মেয়াদ ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি করা দরকার।

চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না, জানতে সংস্থাটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমকে মুঠোফোনে না পেয়ে খুদে বার্তা পাঠিয়ে জানানো হয়।কিন্তু তিনি কোনো জবাব দেননি।

আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি পর্যবেক্ষণ করছি এবং সীমিত পরিসরে আমদানির বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় রাখছি।
ওয়াহিদা আক্তার,কৃষিসচিব।

এনবিআরের শীর্ষ পর্যায়ের আরেক কর্মকর্তা অবশ্য বলেন, চেয়ারম্যানের কাছে আসা চিঠি এখনো হাতে আসেনি বলে কিছু বলতে পারছেন না তিনি।

গত মাসে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) খোলা চিনি ১০৪ ও প্যাকেটজাত চিনি ১০৯ টাকা কেজি দরে বিক্রির সুপারিশ করলে ব্যবসায়ীরা তা না মেনে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে চিনি বিক্রি শুরু করেন।গত সপ্তাহে এ দর বাড়িয়ে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা করার সুপারিশ করা হয়। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি।

কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তারকে পাঠানো চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে,খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম এক মাস আগেও ছিল ৩০ টাকা,এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫০ টাকা আর বর্তমানে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।সরবরাহ বাড়িয়ে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল করার উদ্যোগ নেওয়ার দরকার।টিসিবির তথ্য অনুযায়ী,গতকাল দেশি ও আমদানি-উভয় পেঁয়াজের দরই ছিল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা।

চিঠিতে আরও বলা হয়,পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল করার স্বার্থে জরুরিভিত্তিতে সীমিত পরিসরে আমদানির অনুমতি (আইপি) দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন,আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি পর্যবেক্ষণ করছি এবং সীমিত পরিসরে আমদানির বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় রাখছি।’

কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে যে সুরে বাঁশি বাজাচ্ছেন,সে সুরেই দাম ঠিক হচ্ছে। ভোক্তারা এখানে জিম্মি।
গোলাম রহমান, সভাপতি, ক্যাব।

২৪ লাখ টন বার্ষিক চাহিদার বিপরীতে দেশে এবার ৩৪ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে এবং গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজও উঠবে,এ তথ্য জানিয়ে কৃষিসচিব বলেন,উদ্বৃত্ত উৎপাদন সত্ত্বেও পেঁয়াজের বর্তমান দর কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।

সচিবালয়ে ১১ মে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন,পেঁয়াজের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হবে।তবে পেঁয়াজের আইপি যেহেতু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দিতে পারে না,ফলে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার মূল এখতিয়ার কৃষি মন্ত্রণালয়ের।

তিন পণ্যের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন,একটা কাজ করলেই পেঁয়াজের দাম কমে যাবে।আর সেটা হচ্ছে আমদানি অনুমতি। এ মুহূর্তে এ ছাড়া আর কোনো অস্ত্র নেই।

চিনি ও সয়াবিনের দাম নিয়ে গোলাম রহমান বলেন, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দাম বেঁধে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।উচিত হচ্ছে সরবরাহ ব্যবস্থা ভালো রাখা ও প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করা।উভয় ক্ষেত্রেই ঘাটতি আছে। কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে এখানে যে সুরে বাঁশি বাজাচ্ছেন, সে সুরেই দাম ঠিক হচ্ছে।ভোক্তারা এখানে জিম্মি।বাজারের ২৫ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে না আসা পর্যন্ত একশ্রেণির ব্যবসায়ীর দুষ্কর্ম থেকে মুক্তি মিলবে না।

আরও খবর

Sponsered content