প্রতিনিধি ১ এপ্রিল ২০২৩ , ৪:৪৪:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা প্রত্যাহার এবং ‘বিতর্কিত’ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার অনুষ্ঠিত এসব কর্মসূচি থেকে সাংবাদিক শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়।এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতারা বিবৃতি দিয়ে দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন।
প্রথম আলোর কর্মীদের হয়রানি বন্ধের আহ্বান সিপিজের
‘ভাত না জোটার’ বক্তব্য প্রকাশ করে সাংবাদিক কারাগারে
তুলে নেওয়ার ৩৫ ঘণ্টা পর শামসুজ্জামান কারাগারে
গত বুধবার ভোর চারটার দিকে সাভারের বাসা থেকে সিআইডি পরিচয়ে তুলে নেওয়ার পর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না শামসুজ্জামানের।তিনি প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে সাভারে কর্মরত।বাসা থেকে তুলে নেওয়ার পৌনে দুই ঘণ্টা আগে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রথম মামলা হয়।
গত বুধবার মধ্যরাতে রমনা থানায় করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা একটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।রমনা থানার মামলায় শামসুজ্জামানের পাশাপাশি সম্পাদক মতিউর রহমানকেও আসামি করা হয়েছে।
পাঠক-পেশাজীবী সম্মিলিত ঐক্য মঞ্চ-বগুড়ার উদ্যোগে বগুড়ায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন বিভিন্ন সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা। শনিবার দুপুর ১২টায় শহরের সাতমাথায় এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কবি ও কথাসাহিত্যিক বজলুল করিম বাহারের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বগুড়ার আহ্বায়ক হুমায়ূন ইসলাম ওরফে তুহিন,নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের (নিসচা) বগুড়ার সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান,বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) জেলা আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম,সিপিবির জেলা সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ,যমুনা টেলিভিশনের বগুড়া ব্যুরো প্রধান মেহেরুল সুজন,বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফজলে রাব্বী ডলার প্রমুখ বক্তব্য দেন।
জেলা সুজনের আহ্বায়ক হুমায়ূন ইসলাম বলেন, ‘প্রথম আলোর যে সাংবাদিককে রাতের আঁধারে তুলে নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করে কারাগারে বন্দী করে রাখা হলো,সেই সাংবাদিক সাধারণ মানুষের মনের কথা বলেছেন।দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কশাঘাতে আমরা জর্জরিত। আমরা এই সত্যকে অস্বীকার করতে পারি?’
সিপিবির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ বলেন,ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন জনকল্যাণমুখী আইন নয়। যাঁরা সৎ ও সাহসী সাংবাদিকতা করতে চান,তাঁদের বিরুদ্ধে এই আইন ব্যবহার করা হচ্ছে।সাংবাদিক মেহেরুল সুজন বলেন,স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠ রোধ করতে,গণমাধ্যমকে ঘায়েল করতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করা হয়েছে। এই আইন বাতিল ছাড়া সুসাংবাদিকতা সম্ভব নয়।
‘
শনিবার বেলা ১১টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে সাংস্কৃতিক জোট।সংগঠনের সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি,সদস্যসচিব হালিম আজাদ,খেলাঘর আসরের জেলা কমিটির উপদেষ্টা রথীন চক্রবর্তী,সিপিবির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম,ন্যাপের জেলা কমিটির সম্পাদক আওলাদ হোসেন,বাসদের জেলা সদস্যসচিব আবু নাঈম,বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জেলা কমিটির সভাপতি লক্ষ্মী চক্রবর্তী, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা,প্রথম আলোর নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি মজিবুল হক,দেশ টেলিভিশন ও দৈনিক বাংলার জেলা প্রতিনিধি বিল্লাল হোসেন প্রমুখ।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে রফিউর রাব্বি বলেন,সারা দেশে দুই হাজারের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এ আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে। শামসুজ্জামানকে যে প্রক্রিয়ায় গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানো হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনি।
দিনাজপুরে বাসদ ও জেলা সচেতন সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন।আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায়
প্রথম আলো সত্য ফাঁস করায় সরকার পেছনে লেগেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,প্রথম আলো বরাবর শাসকগোষ্ঠীর চরিত্র উন্মোচনে প্রথম কাতারে ছিল।বিএনপির শাসনামলেও প্রথম আলো শাসকগোষ্ঠীর চক্ষুশূল ছিল।আজকেও শাসকগোষ্ঠীর চক্ষুশূল।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন,সত্য প্রকাশে প্রথম আলোর সাহসী ভূমিকাকে ভয় পায় বলেই রাতের আঁধারে সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তুলে নিয়ে ৩০ ঘণ্টা পর গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।ওই সাংবাদিকসহ পত্রিকাটির সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে।গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরতেই সরকার এই কালো আইন করেছে।অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান বক্তারা।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে শনিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন সাংবাদিকেরা।চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব ও বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিট আয়োজিত কর্মসূচিতে জেলায় কর্মরত বিভিন্ন সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন।
মানববন্ধনে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি ‘দৈনিক মাথাভাঙ্গা’র সম্পাদক সরদার আল আমিন,চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাজীব হাসান,বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সাবেক সভাপতি এনটিভির প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম,প্রথম আলোর চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি শাহ আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।বক্তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার সাংবাদিক শামসুজ্জামানের মুক্তি এবং প্রথম আলো সম্পাদকসহ সারা দেশে সাংবাদিকদের নামে করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় শনিবার দুপুরে প্রতিবাদ সভা করেছে সাংবাদিকেরা।উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এলাকায় আয়োজিত সভা থেকে সাংবাদিক শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানানো হয়।
সরিষাবাড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক সমকালের সরিষাবাড়ী প্রতিনিধি সোলায়মান হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় দৈনিক কালের কণ্ঠের সরিষাবাড়ী প্রতিনিধি মমিনুল ইসলাম, জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া জাহাঙ্গীর,ডেইলি স্টারের জামালপুর প্রতিনিধি শহীদুল ইসলাম,দৈনিক যায়যায় দিনের সরিষাবাড়ী প্রতিনিধি বাদশা ভুইয়া প্রমুখ বক্তব্য দেন।
পাথরঘাটার সাত সংগঠনের নেতাদের বিবৃতি;-
প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানসহ সব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শনিবার পাথরঘাটার সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সাতটি সংগঠনের নেতারা বিবৃতি দিয়েছেন।ওই সংগঠনের নেতারা পাথরঘাটা প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে যৌথভাবে বিবৃতি দেন।তাঁরা বলেন, সাংবাদিকদের কলম বন্ধ করতে সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করছে।ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে হয়রানি করা হচ্ছে।পত্রিকাটির সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়েছে।তাঁরা অবিলম্বে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানসহ সব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
বিবৃতিদাতারা হলেন পাথরঘাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী,দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির পাথরঘাটা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আহসান হাবীব, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) পাথরঘাটা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম,পাথরঘাটা উপজেলা ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান,স্বেচ্ছায় রক্তদান ও সামাজিক সংগঠন ‘প্রত্যয়’-এর সভাপতি মেহেদী সিকদার,সোনার বাংলা ব্লাড ফাউন্ডেশনের সভাপতি মিঠুন মিত্র,যুব রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি পাথরঘাটা উপজেলা শাখার সাবেক দলনেতা আল আমিন ওরফে ফোরকান।

















