ব্যবসা ও বাণিজ্য সংবাদ

কাগুজে কোম্পানির কাছ থেকে ১০৫ টাকা কেজি দরে চিনি কেনা হচ্ছে

  প্রতিনিধি ২৫ মে ২০২৩ , ১০:৫১:৩২ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।১০ মাস ১৫ দিন আগে ২০২২ সালের ৯ জুন কোম্পানি হিসেবে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তর (আরজেএসসি) থেকে নিবন্ধন নেয় ব্র্যান্ড শেয়ার ট্রেডিং লিমিটেড।এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ট্রেড লাইসেন্সও নেয় প্রতিষ্ঠানটি।

এরও তিন মাস পর গত বছরের ৭ নভেম্বর ১০ হাজার টাকা জমা দিয়ে এবি ব্যাংকের গুলশান শাখায় কোম্পানিটি একটি চলতি হিসাব খোলে।এ বছরের ১০ জানুয়ারি কোম্পানিটি ৩৫০ কোটি টাকা ঋণ চেয়ে এবি ব্যাংকে আবেদন করে। আবেদন মঞ্জুর হলেও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) অনিয়ম খুঁজে পাওয়ায় কোম্পানিটি আর টাকা তুলে নিতে পারেনি ব্যাংক থেকে।

গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এমন একটি কোম্পানি থেকেই ১২ হাজার ৫০০ টন চিনি কেনার প্রস্তাব দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অনুমোদিতও হয় প্রস্তাবটি।তবে চিনি কেনার জন্য কোনো দরপত্র ডাকা হয়নি।অর্থাৎ প্রস্তাবই দেওয়া হয় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনার জন্য।এ চিনি কেনার জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ব্যয় হবে ১৩১ কোটি ২৫ লাখ টাকা।প্রতি কেজি চিনির দাম পড়বে ১০৫ টাকা।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান সাংবাদিকদের ব্র্যান্ড শেয়ার ট্রেডিং লিমিটেড থেকে চিনি কেনার প্রস্তাব অনুমোদিত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান।

বৈঠকে আলোচ্যসূচির তালিকায় চিনি কেনার কোনো প্রস্তাব ছিল না।প্রস্তাবটি আলোচনার টেবিলে উপস্থাপন করা হয়। অভিযুক্ত একটি কোম্পানি থেকে চিনি কেনার প্রস্তাব কেন ক্রয় কমিটিতে নিয়ে যাওয়া হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন,প্রস্তাবের সবকিছু মন্ত্রণালয়ে আসে সবার শেষে।অনেক ক্ষেত্রে যাচাইয়ের সুযোগ থাকে না।অভিযুক্ত কি না,তা দেখার দায়িত্ব মূলত ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি)।কমে দিচ্ছে বলে কোম্পানিটি থেকে চিনি কেনা হচ্ছে।আর চিনির সরবরাহ কম থাকায় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে যাওয়া হয়েছে।

খুচরা বাজারে এখন চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি।বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) দুই সপ্তাহ আগে সুপারিশ করেছিল মুনাফা ও সব ধরনের খরচসহ চিনির দাম হতে পারে খোলা ১২০ ও প্যাকেটজাত ১২৫ টাকা কেজি।টিসিবির বাজারদরের তথ্য অনুযায়ী,১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি চিনি কেনাবেচা হচ্ছে।টিসিবির পক্ষ থেকে কেজিতে ২০ টাকা পার্থক্য দেখানোর এমন নজির এবারই প্রথম।

বাণিজ্যসচিবের কথার সূত্র ধরে টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসানের সঙ্গে পক্ষ থেকে আজ কথা বলা হয়।তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিল,কেন এমন একটি কাগুজে কোম্পানির কাছ থেকে চিনি কেনা হচ্ছে? আর বাজারদরের চেয়ে এত কমে ১০৫ টাকা কেজি দরে কোম্পানিটি কীভাবে চিনি বিক্রি করবে?

মো. আরিফুল হাসান বলেন,সরকারি দর যখন ১০৪ থেকে ১০৯ টাকা ছিল,তখন ব্র্যান্ড শেয়ার ট্রেডিং থেকে ১০৫ টাকা দর পাওয়া যায়। এর মধ্যে দর বেড়ে গেছে।তবে কোম্পানি যদি ১০৫ টাকা দরে চিনি দিতে পারে,আমাদের তো নিতে সমস্যা নেই।’

কোম্পানিটি অভিযুক্ত কি না বা কোম্পানির ভেতরে কোনো সমস্যা আছে কি না—এসব দেখার পরিবর্তে দামের দিকেই বেশি নজর ছিল বলে জানান আরিফুল হাসান।বলেন, বড়জোর তারা চিনি দিতে ব্যর্থ হবে।এতে টিসিবির কোনো লোকসান হবে না; বরং তখন কোম্পানিটি তাদের পারফরম্যান্স গ্যারান্টির টাকা ফেরত পাবে না।

বিএফআইইউ এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) জানিয়েছে, ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড নামের একটি কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে ব্র্যান্ড শেয়ার ট্রেডিং লিমিটেডের।ব্র্যান্ড শেয়ার ও ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশনের ঠিকানাও একই।ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানির এমডি আলী হায়দার ওরফে রতনের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে।

আলী হায়দারের কাছে গতকাল জানতে চাওয়া হয়, পরিশোধন কারখানা না থাকা সত্ত্বেও ১০৫ টাকা কেজি দরে তাঁরা সরকারের কাছে কীভাবে চিনি বিক্রি করবেন। তিনি বলেন, দেশ থেকে কিনে নয়, বিদেশ থেকে আমদানি করেই তিনি সরকারের কাছে চিনি বিক্রি করবেন।কর-ভ্যাট দিয়ে ১০৫ টাকা কেজি দরেও তাঁর মুনাফা থাকবে।

আরও খবর

Sponsered content