প্রতিনিধি ১ জুলাই ২০২৫ , ৫:৩৪:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ
অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট।।ইসরাইল-ইরানের ১২ দিনের যুদ্ধ শেষ হয়েছে।কিন্তু এই যুদ্ধ একটি নতুন যুদ্ধের পরিকল্পনা সামনে এনেছে।তা হলো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ইসরাইল ও ভারতের নতুন যুদ্ধের পরিকল্পনা।পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ইসরাইল ও ভারতের গোপন পরিকল্পনার কিছু প্রমাণও এরই মধ্যে পাওয়া গেছে।

এটা এখন আর গোপন নয় যে,ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মধ্যে সম্পর্ক খুবই ভালো।বিখ্যাত আমেরিকান ম্যাগাজিন ফরেন পলিসি সাম্প্রতিক অতীতে ইসরাইল এবং ভারতের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক জোট নিয়ে অনেক নিবন্ধ প্রকাশ করেছে।হোস্টাইল হোমল্যান্ডস বইয়ের লেখক দক্ষিণ আফ্রিকার সাংবাদিক আজাদ এসা বিশ্বাস করেন,ইসরাইলের সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠতা মুসলিম-বিরোধী মনোভাবের সাথে গভীরভাবে জড়িত।
কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইসরাইলি সেনাবাহিনীকে খুব কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা এসার রয়েছে।তিনি বিশ্বাস করেন,মোদি-নেতানিয়াহু জোট কেবল দুটি ব্যক্তির সহযোগিতা নয়।এটি দুটি মতাদর্শের সহযোগিতা।একটি হলো ইহুদিবাদ এবং অন্যটি হিন্দুত্ববাদ।
২০১৭ সালে মোদি প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইসরাইল সফর করেন।তার হিন্দুত্ববাদী আদর্শ ইহুদিবাদ থেকে অনুপ্রাণিত।অনেক হিন্দু জাতীয়তাবাদী কাশ্মীর সংঘাত ইসরাইলের মতো সমাধানের জন্য প্রকাশ্যে আহ্বান জানিয়েছেন।এর মধ্যে রয়েছে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরে হিন্দু জনসংখ্যার পক্ষে জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের পক্ষে কথা বলা।২০২৫ সালের মে মাসে পাকিস্তানের সাথে সংঘাতের পর ভারত কেবল ইসরাইল থেকে নয়,বরং অনেক পশ্চিমা দেশ থেকেও নীরবে প্রচুর অস্ত্র কিনছে।
এখন ভারত ইসরাইলের সাহায্যে পাকিস্তানের ওপর প্রতিশোধ নিতে মরিয়া।সাম্প্রতিক ১২ দিনের যুদ্ধের সময় পাকিস্তান কেন প্রকাশ্যে ইরানকে সমর্থন করেছিল,তা নিয়ে অনেক ইসরাইলি ক্ষুব্ধ।
অনেক পাকিস্তানি ইসরাইলি অধ্যাপক মেইর মাসরির এক্সে একটি পোস্ট লক্ষ্য করেছেন।যিনি জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-রাজনীতির পরিচালক এবং সাবেক প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী।
সংঘাতের মাঝামাঝি সময়ে এই ইসরাইলি অধ্যাপক ১৮ জুন আরবি ভাষায় লিখেছিলেন,ইরানের অভিযানের পর আমরা পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি ভেঙে ফেলার চেষ্টা করতে পারি।এক্সে অনেক ভারতীয়ও এমন দাবি করেছিল।
এই মতামতগুলো কেবল সোশ্যাল মিডিয়াতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।ইউরোপীয় ওয়েবসাইট মডার্ন ডিপ্লোমেসি ২৪ জুন জুলিয়ান স্পেন্সার-চার্চিলের একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে যার শিরোনাম ছিল ইসরাইল ইরানকে পরাজিত করলে পাকিস্তান পরবর্তী টার্গেট।ড. জুলিয়ান কানাডার কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতির অধ্যাপক।
তিনি তার প্রবন্ধটি ইসরাইলি অধ্যাপক মেইর মাসরির হুমকি দিয়ে শুরু করেছিলেন।আরও লিখেছেন,ইরাকের মতো ইরানকে নিষ্ক্রীয় করার পর,পাকিস্তান ইসরাইলের প্রাথমিক লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে।
তিনি বলেছিলেন,ভারতকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে বিমান হামলা,ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন হামলা পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর মারাত্মক ক্ষতি করবে।
তিনি সিন্ধু ও পাঞ্জাবে পাকিস্তানকে বালকানাইজ (ভাগ) করার জন্য একটি প্রচলিত ভারতীয় সামরিক আক্রমণ এবং ভারতের আজাদ কাশ্মীর দখলের আশঙ্কার কথাও উল্লেখ করেছিলেন।যার ফলে ভারত মহাসাগরে চীনের প্রবেশাধিকার বন্ধ হয়ে যাবে।এর অর্থ হলো ভারত এবং ইসরাইল চীনকে গোয়াদর বন্দর থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়।
এবার ভারত ও ইসরাইলের মধ্যে সাম্প্রতিক অস্ত্র বাণিজ্যের দিকে তাকানো যাক। অনেক ইসরাইলি অস্ত্র কোম্পানি ভারতে কারখানা স্থাপন করেছে এবং কেবল ক্ষেপণাস্ত্রই নয়, ইসরাইলি ড্রোনও তৈরি করেছে।
আদানি গ্রুপ ২০১৮ সালে ইসরাইলের এলবিট সিস্টেমের সাথে একটি যৌথ উদ্যোগে হার্মিস ৯০০ ইউএভির মতো সামরিক ড্রোন তৈরি করে।
আদানি ভারতের হায়দ্রাবাদে একটি কারখানা তৈরি করে এবং ৮৫ শতাংশ ড্রোন শুধুমাত্র ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য তৈরি করে।ইসরাইল লেবানন থেকে গাজায় এই ড্রোনগুলো ব্যবহার করে।
ইরানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক যুদ্ধে ইসরাইল এই হার্মিস ৯০০ ড্রোনগুলো সফলভাবে পরীক্ষা করে।২০২৫ সালের মে মাসে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একই ড্রোন ব্যবহার করেছিল কিন্তু পাকিস্তান এই ড্রোনগুলোকে ভূপাতিত করে।হাইফা বন্দরে আদানির ৭০ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে যা সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরান ধ্বংস করে দেয়।
ভারত ও ইসরাইল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বড় বড় পরিকল্পনা করতে পারে কিন্তু তাদের বুঝতে হবে যে পাকিস্তান লেবানন, গাজা,এমনকি ইরানও নয়।নয়াদিল্লি এবং তেল আবিবের মধ্যে এই প্রেমের সম্পর্ক নরেন্দ্র মোদির জন্য আরও একটি অপমানের কারণ হতে পারে।
পাকিস্তান বিমান বাহিনী ২০২৫ সালের মে মাসে চারটি রাফায়েল জেটসহ ভারতের সাতটি বিমান ভূপাতিত করেছে। পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইরানের চেয়ে অনেক ভালো।
সূত্র: জিও টিভি

















