প্রতিনিধি ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৮:৩২:২৯ প্রিন্ট সংস্করণ
মাজহারুল ইসলাম।।সম্প্রতি সাংবাদিক ও অনলাইন কনটেন্ট নির্মাতা ইলিয়াস হোসেনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট অপসারণ করেছে মেটা।বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিলেও,এই ঘটনাকে কেবল ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিতর্ক হিসেবে না দেখে সাংবাদিকতা, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের নীতিমালা এবং মতপ্রকাশের কাঠামোগত সীমাবদ্ধতার আলোকে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।

বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সাংবাদিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে।সংবাদ পরিবেশন,বিশ্লেষণ ও মতামত প্রকাশে ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো মূলধারার গণমাধ্যমের পাশাপাশি বিকল্প পরিসর তৈরি করেছে।ইলিয়াস হোসেন দীর্ঘদিন ধরে এই মাধ্যম ব্যবহার করে সমসাময়িক রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয় নিয়ে মতামত ও বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে আসছেন।ফলে তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য অনুসারী গোষ্ঠী গড়ে ওঠে।
মেটার পক্ষ থেকে অ্যাকাউন্ট অপসারণের ক্ষেত্রে সাধারণত “কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড” লঙ্ঘনের কথা উল্লেখ করা হলেও, নির্দিষ্ট বিষয় বা কনটেন্ট নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা অনেক সময় প্রকাশ করা হয় না।এই সীমিত স্বচ্ছতা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলে,বিশেষ করে যখন বিষয়টি একজন সাংবাদিকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়।
তবে সাংবাদিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে আত্মমূল্যায়নের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।সাংবাদিকতার মূল নীতি হলো তথ্যের যথার্থতা, প্রেক্ষাপটের ভারসাম্য এবং উপস্থাপনায় দায়িত্বশীলতা। ডিজিটাল মাধ্যমে দ্রুত প্রতিক্রিয়া ও তাৎক্ষণিক বিশ্লেষণের প্রবণতা কখনো কখনো যাচাই ও সংযমের জায়গাকে দুর্বল করে দিতে পারে।এতে সাংবাদিকতা ও মতামতের মধ্যকার সীমারেখা অস্পষ্ট হয়ে ওঠে,যা প্ল্যাটফর্ম নীতিমালার সঙ্গে সংঘাতে যেতে পারে।
এখানে সাংবাদিকতার সুফল স্পষ্ট।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে বিকল্প তথ্যপ্রবাহ তৈরি হয়,জনআলোচনার পরিসর বিস্তৃত হয় এবং ক্ষমতার বিভিন্ন স্তরের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলা সহজ হয়।একই সঙ্গে কুফলও রয়েছে।তথ্য যাচাইয়ের ঘাটতি,ব্যক্তিকেন্দ্রিক ভাষা বা অনুমানভিত্তিক বিশ্লেষণ বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করতে পারে এবং বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে।
অন্যদিকে,মেটার মতো কর্পোরেট প্ল্যাটফর্মগুলোর ক্ষমতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।তারা নিজস্ব নীতিমালার ভিত্তিতে কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ করে,যা অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় আইন বা বিচারিক প্রক্রিয়ার বাইরে থাকে।ফলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কার্যত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।এটি গণতান্ত্রিক পরিসরে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগত প্রশ্ন।
ইলিয়াস হোসেনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট অপসারণ তাই একাধিক স্তরের বাস্তবতাকে সামনে আনে।একদিকে সাংবাদিকদের পেশাগত নৈতিকতা ও দায়িত্বশীল উপস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা,অন্যদিকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও আপিল প্রক্রিয়ার সীমাবদ্ধতা।
এই প্রেক্ষাপটে সমাধান একমুখী নয়।সাংবাদিকদের জন্য প্রয়োজন আরও শক্তিশালী সম্পাদকীয় মানদণ্ড ও আত্মনিয়ন্ত্রণ।একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোর জন্য জরুরি সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান এবং কার্যকর আপিল ব্যবস্থার নিশ্চয়তা।
সার্বিকভাবে,ইলিয়াস হোসেনের অ্যাকাউন্ট অপসারণের ঘটনা ডিজিটাল যুগে সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের বাস্তব চ্যালেঞ্জগুলোকে নতুন করে সামনে এনেছে।এটি কোনো পক্ষের একক জয় বা পরাজয় নয়; বরং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা ও জবাবদিহিমূলক ডিজিটাল শাসনের প্রয়োজনীয়তার একটি বাস্তব উদাহরণ।

















