প্রতিনিধি ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৫:৪৪:২১ প্রিন্ট সংস্করণ
ইবি প্রতিনিধি।।শত চেষ্টার পরও কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) র্যাগিংয়ের অভিযোগ থামছে না।র্যাগিং রোধে মাইকিং,লিফলেট বিতরণ,সেমিনার,সচেতনতামূলক র্যালি এখন ক্যাম্পাসের নিয়মিত ঘটনা।র্যাগিং বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এসব কর্মকাণ্ড প্রশংসনীয় হলেও তাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক নির্যাতনের ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ইবিতেও অনেক আগে থেকেই সিনিয়র-জুনিয়র বন্ডিং এবং নবীন শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের আদব-কায়দা শেখানোর প্রথা প্রচলিত।কিন্তু সম্প্রতি বিষয়টি পরিচয়পর্ব বা ‘ম্যানার’ শেখানোর গণ্ডি পেরিয়ে র্যাগিংয়ে পরিণত হয়েছে।
ইবিতে ভয়াবহ র্যাগিংয়ের ঘটনা প্রথম সামনে আসে ফুলপরী নামক এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে।পরে আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক সহ-সভাপতিসহ মোট পাঁচ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এর আগেও ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সমাজকল্যাণ বিভাগের তিন ছাত্রীকে র্যাগ দেয়ার অভিযোগে একই বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের পাঁচ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি বিধানের পরও র্যাগিং থামছে না বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সূত্র জানায়,শুধু ক্যাম্পাসে নয়,পার্শ্ববর্তী ও কুষ্টিয়ার মেসগুলোতেও পরিচয়পর্ব ও ম্যানার শেখানোর নামে চলছে র্যাগিংয়ের মতো ঘৃণ্য অপরাধ।
সর্বশেষ দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী ফুলপরীকে নির্যাতনে পাঁচ শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কারের ঘটনার ১০ দিন না পেরোতেই ফের নবীন এক শিক্ষার্থীকে তিন দিনব্যাপী মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।এ পর্যায়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলে নয়,বরং নির্যাতনের জন্য তারা বেছে নিয়েছিল ক্যাম্পাসের অন্তর্গত খেলার মাঠ ও হল-সংলগ্ন পরিত্যক্ত স্থান।অভিযোগ রয়েছে,শারীরিক নির্যাতন না করলেও মানসিকভাবে নির্যাতনসহ অকথ্য ভাষায় গালাগালি এবং ভুক্তভোগীদের হুমকি-ধামকি দেয়া হয়।
এ ঘটনায় প্রথমে ভুক্তভোগী হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী তাহমিন ওসমানের বাবা ওসমান গনি শওকত বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে মেইলে অভিযোগ জানান এবং পরে ৯ সেপ্টেম্বর লিখিত অভিযোগ দেন তিনি।ঘটনার তদন্তে ইতোমধ্যে ৫ সদস্যের কমিটি কাজ করছে বলে জানা গেছে।
উক্ত ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন- শুভ,মিজানুর ইমন,আকিব,পুলক ও সাকিব।তারা সবাই হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘জুনিয়ররা সিনিয়রদের সম্মান করবে,এটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সিনিয়ররা তাদের ছোট ভাইবোনদের স্নেহ করবে, এমনটাই হওয়া উচিত।ম্যানার বা ভদ্রতা শেখানো পরিবারের কাজ,শিক্ষকদের কাজ।যতদিন সিনিয়র শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ম্যানার শেখানোর প্রবণতা দূর হবে না,ততদিন র্যাগিংও বন্ধ হবে না।’
ঘটনার অভিযোগের পর কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও অ্যান্টি র্যাগিং ভিজিল্যান্স কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদের সঙ্গে।আলাপকালে সকলের সহযোগিতা ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় র্যাগিং চিরতরে বন্ধ হবে বলে আশবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রক্টর বলেন,র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর আগের দিনই সাংবাদিক সংগঠনগুলোতে চিঠি দেয়া হয়েছিল এবং প্রায় ২০টি পত্রিকায় র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে উল্লেখ করে নিউজ হয়েছিল।এছাড়া,সচেতনতামূলক মাইকিং হয়েছে পরপর কয়েক দিন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তার আবেদনে উল্লেখ করেছে,যখন জিমনেশিয়ামের পাশে তাকে র্যাগিং দেয়া হচ্ছিল,তখন সে র্যাগিংবিরোধী প্রচারের শব্দ শুনতে পাচ্ছিল।বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে নোটিশ দেয়া হয়েছিল।বিভাগের সভাপতি,ডিন, প্রভোস্টদের কাছে প্রজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে।বিলবোর্ডে র্যাগিংবিরোধী প্রচার রয়েছে।একাধিক র্যালি করা হয়েছে। প্রশাসনের নেতৃত্বে ডিন,প্রভোস্ট,সভাপতিদের নিয়ে র্যাগিং বন্ধে করণীয় বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে।তার মধ্যেই এইসব চলছে।’
তিনি আরও বলেন,৯ সেপ্টেম্বর সাড়ে তিনটায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, পরদিনই রেজিস্ট্রার বরাবর নোট পাঠিয়েছি।এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি হয়েছে।আমি বিভাগীয় সভাপতি,ইবি থানার ওসিকে ওই ছাত্রকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছি।একজন সহকারী প্রক্টরকে সার্বক্ষণিক দেখভাল করার দায়িত্ব দিয়ে চিঠি দিয়েছি।এ ছাড়াও,ওই ছাত্রের বাবার চাওয়ায় হল প্রভোস্টকেও চিঠি দিয়েছি তাকে একটি সিট দেয়ার জন্য।
‘আমার মনে হয়,চেষ্টার কোনও ত্রুটি করা হয় নাই।তবুও, এসব ঠেকানো দূরহ হয়ে উঠছে।কারণ কোভিড-পরবর্তী ব্যাচগুলো কেমন যেন কারও কথাই শুনছে না। তবে আমি আশাবাদী,সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় এসব একদিন বন্ধ হবে।’














