প্রতিনিধি ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৪:১৩:২২ প্রিন্ট সংস্করণ
অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট।।রাশিয়ার ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনকে হামলা চালানোর অনুমতি দিলে তার প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি আগেই দিয়েছে মস্কো।সতর্ক করে পুতিন প্রশাসন বলেছে,এ সিদ্ধান্তের জবাব হিসেবে তারা কোনোকিছুই বিকল্প হিসেবে বাদ রাখছে না।ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইউক্রেনকে ওই অনুমতি দিয়েছে এবং দেশটি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলাও চালিয়েছে।

এ সপ্তাহের শুরুতে ক্রেমলিন তার পারমাণবিক নীতিতে আনুষ্ঠানিক পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছে।এতে রাশিয়ার মাটিতে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সহায়তায় কোনো হামলা হলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে সম্ভাব্য জবাব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।তাই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে এখন কেমন জবাব দিতে পারেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, উঠছে সেই প্রশ্ন।
রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা কতটুকু
ইউক্রেন–রাশিয়া সংঘাতে পশ্চিমা দেশগুলো যাতে না জড়ায়, সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বেশ আগে থেকে নিজ কৌশলগত অস্ত্রসম্ভার নিয়ে জোরশোরে প্রচার–প্রচারণা চালায় মস্কো।তবে সব হুমকি সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র বলেছে,তারা রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র মজুতের স্থাপনাগুলোতে অস্বাভাবিক কোনো চলাচলের লক্ষণ দেখেনি।এতে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায়,বাহ্যিকভাবে রাশিয়ার কৌশলগত যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েনে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের ধারণা,রাশিয়ার এখনই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার সম্ভাবনা নেই।তবে এ নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার বিষয়ে সতর্ক করে দেন তাঁরা।
জাতিসংঘের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইউএন ইনস্টিটিউট ফর ডিসআর্মামেন্ট রিসার্চ’ এর জ্যেষ্ঠ গবেষক পাভেল পডভিগ বলেন,ইউক্রেনে পারমাণবিক বোমা ফেলার বিষয়টি মস্কোর বিকল্পের তালিকায় আছে বলে মনে করেন না তিনি। প্রাথমিকভাবে এর কারণ,এটি মস্কোর কোনো ধরনের সামরিক লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে না।তা ছাড়া,এ মুহূর্তে ইউক্রেনে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে রুশ বাহিনী।
উপরন্তু,ইউক্রেনের সঙ্গে সংঘাতে মস্কো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করলে সেটি হবে ১৯৪৫ সালের পর এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের প্রথম ঘটনা।আর সে ক্ষেত্রে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বের বড় অংশ এমনভাবে ঐক্যবদ্ধ হবে,যা অনুমান করা মস্কোর জন্য হয়তো সহজ হবে না,যুক্তি দেন পডভিগ।
এ সপ্তাহের শুরুতে ক্রেমলিন তার পারমাণবিক নীতিতে আনুষ্ঠানিক পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছে।এতে রাশিয়ার মাটিতে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সহায়তায় কোনো হামলা হলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে সম্ভাব্য জবাব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।তাই,যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে এখন কেমন জবাব দিতে পারেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, উঠছে সেই প্রশ্ন।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্লুস্কাইয়ে পাভেল পডভিগ বলেন,তাই,এটি হবে বড় জুয়া খেলার মতো।তবে,ক্রেমলিন তার সুযোগ কাজে লাগাতে প্রস্তুত,আমি এ ধারণাকে বাদ দিচ্ছি না।বিশেষ করে,মস্কো যদি মনে করে,বর্তমান সংঘাতে সে দুর্বল সাড়া দিচ্ছে।আর রাশিয়া এ জুয়া খেলবে কি না, তা আমরা জানি না।’
পশ্চিমাদের অন্য কোনভাবে জবাব দিতে পারে রাশিয়া
শত্রুদের মোকাবিলায় বর্তমানে লড়াইয়ের হাইব্রিড কৌশল বেশ ভালোভাবে ব্যবহার করছে রাশিয়া।শান্তি ও সংঘাতের মাঝামাঝি স্থান ‘গ্রে জোন’–এ এমন কৌশল কাজে লাগাচ্ছে দেশটি।
রাশিয়া পশ্চিমা দেশসমূহ অভিমুখী অভিবাসীদের অস্ত্রে সজ্জিত করছে।তাঁদের ঠেলে দিচ্ছে পোল্যান্ড,লিথুয়ানিয়া ও ফিনল্যান্ড সীমান্তে।এর লক্ষ্য,ওইসব দেশে রাজনৈতিক জটিলতা তৈরি করা।
রুশ সামরিক গোয়েন্দারা যুক্তরাজ্য,জার্মানি,স্পেন,অস্ট্রিয়া, তুরস্ক ও অন্যান্য দেশে গুপ্তহত্যা চালাচ্ছেন।অন্তর্ঘাতমূলক হামলা চালানোর পরিকল্পনাও করছেন তাঁরা।জুলাইয়ে ডিএইচএল কার্গোর কেন্দ্র জার্মানি ও যুক্তরাজ্যে অগ্নিসংযোগে ব্যবহৃত যন্ত্র ব্যবহারের খবর পাওয়া গেছে।পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ধারণা,এসব বোমা হামলার চেষ্টা ছিল উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশে উড়োজাহাজে হামলা চালানোরই মহড়া।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিশেষ করে বাল্টিক অঞ্চলে জিপিএস সংকেত আটকে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।এতে যাত্রীবাহী হাজার-হাজার উড়োজাহাজের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
আটলান্টিক কাউন্সিলের গ্রে–জোন কনফ্লিক্টবিষয়ক বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ ব্রাউ বলেন,আমরা রাশিয়াকে প্রক্সি লড়াইয়ের কৌশল খুব ভালোভাবে ব্যবহার করতে দেখছি।’
পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে কাদের কাজে লাগাচ্ছে রাশিয়া
পশ্চিম দেশগুলোতে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাতে মস্কো তার মিত্র ও প্রক্সি গ্রুপগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলছে।গত মাসে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, লোহিত সাগরে পশ্চিমা দেশগুলোর পণ্যবাহী জাহাজ নিশানা করতে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সুনির্দিষ্ট তথ্য দিচ্ছে রাশিয়া।
ব্রিটেনের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা এমআই ফাইভের প্রধান গত মাসে বলেছেন,যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অগ্নিসংযোগ,অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতাসহ বিশৃঙ্খলা তৈরি করার মিশনের অংশ হিসেবে রুশ গোয়েন্দারা অপরাধী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে নাটকীয়ভাবে তাঁদের যোগাযোগ বাড়িয়েছেন।












