অপরাধ-আইন-আদালত

আল্লাহর কসম,বাবারে আমি ছারুম না-মতিউরের কন্যা ইপ্সিতা

  প্রতিনিধি ২৭ জুন ২০২৪ , ৪:৩৮:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান সরকারি চাকরি করে স্ত্রী,সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের নামে গড়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ।এক ছাগলেই খেয়ে ফেলেছে তার সাজানো গুছানো সাম্রাজ্য।মাত্র এক সপ্তাহেই সব কিছু অপরিচিত হয়ে উঠেছে মতিউরের কাছে।এখন যেন কাছের লোকরাও চিনতে চাইছেন না।

মতিউরের কানাডা প্রবাসী মেয়ে ফারজানা রহমান ইপ্সিতা তার স্বজনের কাছে ভয়েজ মেসেজে বাবার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাঠানো চাঞ্চল্যকর ওই ভয়েজ মেসেজের কিছু অংশ এ রকম- ‘বিশ্বাস করেন,আমার বাবারে প্রটেক্ট করার কোনো ইচ্ছাই আমার নেই।তার ওপর আমার জিদ।আল্লাহর কসম,বাবারে আমি ছারুম না।সে আমারে ধোঁকা দিছে (দিয়েছে),আমার মারে (মাকে) ধোঁকা,আমার ভাইরে ধোঁকা দিছে।আমি তারে ছারুম?জীবনেও না।তার জন্য আমার নাম নষ্ট হবে,মার নাম নষ্ট হবে,এইটা আমি হইতে দিমু না।’

শুধু প্রথম পক্ষের এই মেয়ের ক্ষোভ নয়,মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে পাড়ি জমানো দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলীও চরম দুশ্চিন্তা ও হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন।তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন মতিউর।যে মেয়ের সঙ্গে দিনে অন্তত একবার কথা বলতেন,সেই মেডিকেল পড়ুয়া মেয়ে মাধবী বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ভেঙে পড়েছেন।আর প্রথম স্ত্রী রায়পুরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ ও তার সন্তানরা আজকের এ পরিস্থিতির জন্য দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী-সন্তানদের দায়ী করছেন।একই সঙ্গে স্বামীকে ডিভোর্স দিতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে চাপ দিচ্ছেন মতিউরের বোন। বিশেষ করে মঙ্গলবার মতিউরের বিভিন্ন ব্যাংক ও পুঁজিবাজারের বিও অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার পর সব ওলটপালট হয়ে গেছে।ভাইয়েরাও চলে গেছেন আত্মগোপনে। বন্ধু,শুভাকাঙ্ক্ষীরাও দূরে সরে আক্ষেপ ও মজার ছলে বলছেন-এক ছাগলে তছনছ হয়ে গেছে মতিউরের সাজানো বাগান। একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ইতিমধ্যে বিশ্বখ্যাত ম্যাকলারেন ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল গাড়ির ছবিসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছেন এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের প্রথম পক্ষের মেয়ে ফারজানা রহমান ইপ্সিতা।যে বাবার কল্যাণে কানাডায় তার বিলাসী জীবন,সেই বাবাকেই এখন ছেড়ে কথা বলছেন না। স্বজন-শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে চালাচালি হওয়া তার একাধিক ভয়েজ মেসেজের ক্লিপ এসেছে এ প্রতিবেদকের কাছে।এসব মেসেজের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো-

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছাগলকাণ্ড ভাইরাল হওয়ার প্রসঙ্গে ইপ্সিতা তার ভয়েজ মেসেজে বলেন, ‘মানুষের দোষ তো নাইরে ভাই।দেশের মানুষ তো আসলেই কষ্ট করে।এই লোকটা আমার মারে এত বড় চিট করল ভাই। আমি এক মিনিট পরপর আমার মার (মায়ের) সঙ্গে কথা বলতাছি (বলছি)।আমার মা হাউমাউ করে কান্দে (কাঁদে)। আমার ভাই কান্দে।আমার ভাই আমারে বলে,বাপ আমাদের কখনো ভালোবাসে নাইরে আপু।ভালোবাসলে সে এইভাবে চিট করতো না।এখন কী করব জানি নারে ভাই।আমার আর ভাল্লাগে (ভালো লাগে) না।মানুষের রাগ তো আমি বুঝতে পারছি। বিকজ আপনারা অনেক ভুক্তভোগী। এই…সরকার। আল্লাহ মাফ করুক,আসলেই ভুক্তভোগী।কিন্তু আমার ফ্যামেলি,আমার,আমার মা-ভাইয়ের কোনো দোষ এখানে ছিল না ভাই। তার আছে অনেক।আমি জানি টাকাপয়সাও ইলিগ্যাল না।তার ভালো ফ্যামেলি।বিয়াও করছিল ভালো ফ্যামেলির মাইয়া (মেয়ে)।তাইলে ভালো ফ্যামেলির মাইয়ারে বিয়া (বিয়ে) কইরা (করে) তুই রাখতে পারলি না।তোর এত খারাপ লাগছে,আমার মারে ছাইড়া তুই চইলা যাইতি।তুই আমাদের চিট করলি কেন।তুই তোর চাকরি বাঁচাইতে পারবি, টাকা বাঁচাইতে পারবি।কিন্তু তুই যে আমাদের ধোঁকা দিছোস, এইটা আমরা কী করুম।আমরা কই যামু (যাব),কারে মুখ দেখামু (দেখাব)।’

ভয়েজ মেসেজের আরেকটি ক্লিপে তিনি বলেন,আমার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটা খাইয়া দিছে হ্যাকারে।ইভেন আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রবলেম করতাছে।মানুষ আমার পেছনে লাগছে কেন বুঝলাম না।ইভেন আমার পেজে…এগুলো কে করাচ্ছে? আমি কার ক্ষতি করলাম।আমার মার অ্যাকাউন্টে প্রবলেম করতাছে।আমার মা তো একজন উপজেলা চেয়ারম্যান।এখানে না,কেউ একজন মাস্টার গেম আছে,মানে কেউ একজন আমাদের সঙ্গে গেম খেলতাছে।আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর।আপনি পলিটিক্সে ছিলেন।আপনি বোঝেন না। মনে হইতাছে আমাদের সঙ্গে গেম খেইলা ওই ফ্যামেলি সামনে আসতে চাইতাছে।বেটার তো আসলেই টাকাপয়সা আছে।তার পুরা চৌদ্দ গোষ্ঠী ভালো বিজনেজ কইরা যাইতেছে।তার ভাই ভালো বিজনেজ করে।এক্সপোর্ট-ইম্পোর্টের বিজনেস।তার ছোট ভাইয়ের তিন-চারটা গার্মেন্ট।সব নিজের।তার তো কিছুর অভাব নাই।আমার কেন জানি মনে হয়,সম্পত্তির জন্য ওই সেকেন্ড ফ্যামেলি সামনে আসতে চাইছে।বাপে মনে হয় বলছে না,এখন সে আমাদের অ্যাকিউস কইরা কইরা এই কাহিনিটা করছে। নাইলে কেন করবে।এখন কয় ছাগল সে কিনে নাই। ছাগল বউয়ের জন্য কিনছে,বউ পছন্দ করছিল।অথচ শুরুতে কইছিল বাবা পছন্দ করছে।শুরু কী করছে পোলায়।’ মতিউরের প্রমোশন,সম্পদ,ব্যবসা-বাণিজ্য ও পারিবারিক ড্রামার অনেক গোপন তথ্য ফাঁস হয়েছে ইপ্সিতার ভয়েজ মেসেজে।

উল্লেখ্য,সম্প্রতি কুরবানির জন্য ১২ লাখ টাকায় ছেলের (দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলীর ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত) কেনা ছাগল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে বাবার পরিচয়ে টান পড়ে।ছাগল ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন খামার থেকে ৭০ লাখ টাকার গরু কিনেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে উঠে আসে।এর পর থেকে মতিউর রহমানের ছেলের দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপন; মতিউর রহমান ও পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট,শুটিং স্পট,বাংলো বাড়ি,জমিসহ নামে-বেনামে সম্পত্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।নির্দিষ্ট বেতনের চাকরি করলেও আয় করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা;যা অনেকটা সিনেমার কাহিনিকেও হার মানায়।

আরও খবর

Sponsered content