প্রতিনিধি ৯ আগস্ট ২০২৫ , ১:৪৭:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ
রবিউল ইসলাম রবি॥প্রকৃত জমির মালিককে বিবাদি না করে, পরবর্তীতে মৃত ব্যক্তিকে বিবাদী করে বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে মামলা দায়ের করেন নগরীর পূর্ব ও দক্ষিণ রিফিউজি কলোনির বাসিন্দা সাইদা জাহান লাভলী। আবার দায়েরকৃত মামলার নোটিশ জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস কার্যালয় থেকে প্রেরণ করা হয়নি বিবাীদের।লোকমুখে খবর পেয়ে প্রকৃত জমির মালিক তার বৈধ কাগজপত্র নিয়ে দায়েরকৃত ওই মামলায় বিবাদী শ্রেণীভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করেন।

বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মৃধা মো: মোজাহিদুল ইসলাম মামলার ধার্য তারিখের দিন দুই পক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতিতে বাদীর দায়েরকৃত মামলাটি খারিজ করে দেন।
বিবাদী শ্রেণীভুক্তর আবেদনকারীর পক্ষে খারিজের নকল কপি চাইলে পেশকার ও রেকর্ডকিপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, স্যার মামলাটি ওপেন কোর্টে খারিজের নির্দেশ দিয়েছেন। খারিজের নকল কপি পাওয়ার জন্য আবেদন করলে দেয়া হবে।
পরবর্তীতে খারিজের আদেশ ও কপি দেয়া নিয়ে ডিগবাজি দেয় বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার ও পেশকার রফিক। রফিক বলেন, কপি নেজারত শাখায় গেছে।নেজারত শাখা থেকে বলেন,বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট স্যার খারিজ কপি দিতে নিষেধ করেছেন।
বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মৃধা মো: মোজাহিদুল ইসলাম বলেন,বিবাদী শ্রেণীভুক্তর কেউ আমার কাছে আসেনি। আগামী সোমবার (১১ আগস্ট) অফিসে থাকব তখন আসলে বিষয়টি দেখব।অনুসন্ধানকালে ঘটনাচক্রে উঠে এসেছে বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের অনিয়ম দুর্নীতির চিত্র।
বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে,২০২৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নগরীর ১৪ নং ওয়ার্ড রিফিউজি কলোনির বাসিন্দা সাইদা জাহান লাভলী বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে প্রতিবেশী ৪ জনকে বিবাদী করে ১৯৫৬ সালের প্রজাসত্ব আইনের ৪২ এর (ক) ধারার অনুযায়ী একটি মামলা দায়ের (নং-১২১/২৫) করেন।বিবাদীরা হলেন- দোলোয়ার হোসেন,শাফিয়া বেগম,রিজিয়া বেগম ও হাবিবুর রহমান।পরবর্তীতে বাদি গত ১৮/০৩/২৫ তারিখে লিখিত আবেদন করে বিবাদী হাবিবুর রহমানকে বাদ দিয়ে সেই স্থানে গত ৩০/০১/২০০৮ তারিখে মারা যাওয়া আব্দুল মোতালেব হাওলাদার এর নাম অর্ন্তভুক্ত করা হয়।যা মৃত মোতালেবের ওয়ারিশরা কেউ জানেন না।
লাভলীর দায়েরকৃত মামলায় বর্ণনায় রয়েছে- ৫০ নং বগুড়া আলেকান্দা মৌজার ডিপি খতিয়ান নং ৫২২৪,৮৬৪৭,১১৩৮৬ ও ১৬৯০ এবং বিএস দাগ ১৩৫৩২, ১৩৫৩৫ ও ১৩৫৩৬ দাগের ৩.৩৫ শতাংশ জমি রেকর্ড ও নকশা সংশোধনের আবেদন করেন।তবে ৪২ এর (ক) ধারার অনুযায়ী মামলার বর্ণনার উল্লেখ নেই।
মামলার সাথে যুক্ত করা দলিলে উল্লেখ রয়েছে,গত ৩/১২/৯৭ তারিখে রিফিউজি কলোনির তিন বাসিন্দার কাছ থেকে ৩.৩৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেন লাভলী।বরিশাল সদর সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয় দলিল নং ১৩৭৬৭।উক্ত দলিলে ৭ম পাতায় তফসিল সম্পত্তির পরিচয় দেখা যায় বিএস ডিপি খতিয়ান ১১৩৮৬,যার বিএস নং ১৩৫৩২ দাগে জমির পরিমাণ ২.১০ শতাংশ।যা দাতা বা জমি বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেন গংদের নামে লাভলীর দাবিকৃত জমির স্থানে রেকর্ড নেই।তবে লাভলীর ক্রয়কৃত বিএস ডিপি খতিয়ান ৫২২৪,যার বিএস নং ১৩৫৩৫ দাগে ১.২৫ শতাংশ জমির পরিমাণ ঠিক রয়েছে।
সাইদা জাহান লাভলী এই একই জমি নিয়ে গত ১২/০৫/২০২৫ তারিখে বরিশাল সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানী মোকাদ্দমা (নং-২২৬/২৫) দায়ের করেন।মামলায় একমাত্র বিবাদী হলেন- রিফিউজি কলোনির মাহাবুব আলমের স্ত্রী রওশন আরা খাতুন।মামলাটি আদালতে চলমান রয়েছে।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে,১৯৫৬ সালের প্রজাসত্ব আইনের ৪২ এর (ক) ধারা হল- প্রতারণা ও জাল জালিয়াতি সংক্রান্ত।অথচ দায়েরকৃত মামলার বাদী লাভলী প্রতারণা ও জাল জালিয়াতি পূর্বক নিজেই জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের পেশকার ও রেকর্ডকিপার মো. রফিকুল ইসলাম ও চিহ্নিত দালাল নাসিরের সহযোগিতায় মামলাটি দায়ের করেছেন।যার প্রমাণ- জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস থেকে দেয়া বিএস পর্চা অনুযায়ী ডিপি ৮৬৪৭,যার বিএস দাগ ১৩৫৩৬,উক্ত ডিপি খতিয়ানের একমাত্র মালিক হলেন রওশন আরা খাতুন।বাদী লাভলি প্রকৃত জমির মালিক রওসন আরা খাতুন কে বিবাদি না করে তার ডিপি ৮৬৪৭,যার বিএস দাগ ১৩৫৩৬ নম্বর মামলার বর্ণনায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
লোকমুখে রওশন আরা খাতুন এমন ঘটনা শুনতে পেয়ে প্রায় দুই মাস পর সাইদা জাহান লাভলীর দায়েরকৃত ওই মামলায় গত ২৮/৪/২৫ তারিখে বিবাদী শ্রেণীভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করেন।বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার আবেদনটি গ্রহণ করেন এবং তার নির্দেশে লাভলীর দায়েরকৃত মামলাটি ১২১/২৫ নম্বর থেকে মিসকেস ১৩৬৩/২৫ নম্বরে রূপান্তরিত হয়।
অপরদিকে মৃত মোতালেবের ডিপি খতিয়ান নং ১৬৯০,যার বিএস দাগ নং ১৩৫৩২ ও ১৩৫৩৫।উক্ত বিএস দাগের ১৩৫৩৫ নম্বর থেকে ১.১৯ শতাংশ জমির ভুয়া ওয়ারিশ সাজিয়ে বাদী লাভলী।মৃত মোতালেবের ছেলে তারিকুল ইসলাম মেয়ে মমতাজ বেগম বলেন- এই মামলা সম্পর্কে তারা সহ ৭ ভাই-বোনের কেউ কোন কিছুই জানেন না।এমনকি লাভলীর কাছে তার ভাই-বোনেরা কেউ জমি বিক্রি করেননি।
রওশন আরা খাতুন ও মৃত মোতালেব হাওলাদার- বাদী লাভলীর দলিলদাতা মো. দেলোয়ার হোসেন,রিজিয়া বেগম ও সাফিয়া বেগম ওয়ারিশ তো দূরের কথা কোন আত্মীয়-স্বজন হন না।শুধু প্রতিবেশী বাদী লাভলী সরকারি অফিসিয়াল ৫১ নং সিটের ম্যাপের ১৩৫৩৫ ও ১৩৫৩৬ দাগ পরিবর্তন করে তার দলিল অনুযায়ী ম্যাপ করার চেষ্টা চালিয়ে ‘রওশন আরা খাতুন ও মৃত মোতালেব হাওলাদার’ এর জমি দখলে নিতে চায়।
বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার গত ২৯/০৭/২০২৫ তারিখ উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে ১৩৬৩ নং-মিস কেসটি খারিজে আদেশ দেন।এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেন ৪ ও ৫ নং বিবাদী পক্ষের আইনজীবী মো. বাহাদুর সাহ,তপন কুমার, সঞ্জিব কুমার সরকার।এ আদেশের পর ৩০/০৭/২০২৫ তারিখ দুপুরে লাভলীর উপস্থিতিতে তার আইনজীবী সমিতন চয় দাস জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসারের কক্ষে গিয়ে প্রায় ১ ঘণ্টা থাকার পরই পুরো ঘটনা ঘুরে যায়।
বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে সাইদা জাহান লাভলীর কাছে মুঠোফোনে কল দিলে সাংবাদিক পরিচয় শোনা মাত্রই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।














