রাজনীতি

সেচ্ছাচারিতার, খামখেয়ালিপনা ও অসাংগঠনিক কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে সান্টুসহ ৭ নেতা কর্মীর পদত্যাগ

  প্রতিনিধি ৭ জুলাই ২০২২ , ২:০৭:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক॥ দেশব্যাপী সাংগঠনিকভাবে বিএনপিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা ও সুসংহত করতে বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক গঠনের পর যত দিন অতিবাহিত হয়েছে ততই বিএনপির কর্মী সমর্থকদের জন্য বুমেরাং হচ্ছে দলের শীর্ষ নেতারা। এক এক করে বেড়িয়ে আসছে তাদের বাণিজ্যিক ও নিজ আধিপত্য বিস্তারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট। বরিশাল বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কতিপয় নেতা একে অপরের বিরাগ ভাজন হয়ে পরস্পর পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে নিজেদের আধিপাত্য ও সামাজ্য বিস্তারে উপেক্ষিত হচ্ছে সাধারণ নেতাকর্মীরা।

এরফলে সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পরার পাশাপাশি বিএনপি’র শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে বিএনপিই। পছন্দমত পদ দেয়ার লোভ দেখিয়ে দলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজী, উপঢৌকন নেয়া ও একে অপরকে দোষারোপের কারণে ক্রমেই সাংগঠনিকভাবে দূর্বল হয়ে পরেছে বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপি।

বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির আহবায়ক এ্যাড. মুজিবুর রহমান নান্টু এর সেচ্ছাচারিতার, অমানবিকতা, খামখেয়ালিপনা ও অসাংগঠনিক কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে কমিটির সদস্য পদ থেকে চলমান মাসের ৬ জুলাই স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন শাহ আলম মিঞা, মোঃ আহসান কবির নান্না হ্ওালাদার, মোঃ রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ, গোলাম মাহমুদ মাহাবুব মাষ্টার, মোঃ আব্দুস সালাম ও ডেইজি বেগম। পদত্যাগের বিষয়টি তারা অনুলিপি আকারে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিসহ জেলা বিভাগের একাধিক নেতার বরাবর প্রেরণ করেছেন।

বরিশাল জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য পদ থেকে সিঙ্গাপুরে বসে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু। বুধবার (৬ জুলাই) দুপুর ১টার সময় বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে তিনি মুঠোফোনে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন।

এ সময় উপজেলা ও পৌর বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু ভিডিও কনফারেন্সে বলেন, বরিশাল জেলা (দঃ) বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই আহবায়ক মুজিবুর রহমান নান্টু ও সদস্য সচিব আকতার হোসেন মেবুল উজিরপুর-বানারীপাড়া তথা বরিশাল-২ আসনের বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে কিছু আওয়ামী ঘরানার লোক সামনে আনার পাঁয়তারা করছেন।

স্বেচ্ছায় তিনসহ ৬ জন একযোগে পদত্যাগ করেছেন বলে মুঠোফোনে সত্যতা স্বীকার করেছেন মোঃ রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ।

গত বছর মজিবর রহমান সরোয়ারকে বাদ দিয়ে বরিশাল মহানগর বিএনপির নয়া আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। ঘোষিত ওই কমিটির মাধ্যমে বরিশাল বিএনপিতে সাবেক এমপি, মেয়র ও হুইপ মজিবর রহমান সরোয়ারের প্রায় ৩০ বছরের একক আধিপত্যের অবসান হয়েছে।

যদিও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব পদে রয়েছেন তিনি। কিন্তু তারপরও চেষ্টা করেছিলেন যুগ্ম মহাসচিবের পাশাপাশি বরিশাল মহানগরের সভাপতি পদটিও ধরে রাখার। কিন্তু এতে ব্যর্থ হন তিনি। সরোয়ার কমিটি থেকে বাদ পরায় তাঁর নতুন প্রেসক্রিপশন ও কূট-কৌশলে বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপির বিতর্কিত সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম শাহিন, আহবায়ক এ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান নান্টু ও সদস্য সচিব আকতার হোসেন মেহবুলের নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে সাংগঠনিক কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পরেছে ।

সরোয়ার ছাড়া বিএনপি অচল, এমনটাই প্রমাণ করতে চায় এ কমিটির অধিকাংশ নেতা কর্মীরা। কিমিটর কার্যক্রমকে পরিকল্পিতভাবে নিস্কৃয় রেখে সফলতার কোন কার্যক্রম না আসে তা বোঝাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সরোয়ার পন্থি বিএনপি সমর্থকরা।

বিশ্বস্ত এক সূত্র জানায়, বর্তমান কমিটির আহবায়ক মুজিবুর রহমান নান্টুকে বরিশাল জেলা দক্ষিণের সভাপতি করার লক্ষ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা উপেক্ষা করে গোপনে সরোয়ারের সাথে হাত মিলিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন।

দলটির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিলকিস জাহান শিরিন মেয়র প্রার্থী হবেন আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হবেন সরোয়ার। এক্ষেত্রে কেউ কারো প্রতিপক্ষ নয়। সরোয়ার প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে জেলা বিএনপি তার পক্ষে থাকা জরুরী। দুই পদের অনুকূলে তারা একে অপরের পরিপূরক হয়ে কার্যক্রম সম্পন্ন করবে।

বিএনপির দুর্গ হিসেবে খ্যাত বরিশালে বিএনপির ত্যাগী, নির্যাতিত ও পরীক্ষিত কর্মীবান্ধব নেতা আলহাজ্ব এবায়েদুল হক চাঁনকে সভাপতি ও শাহীনকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১৪ সালে বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটি ২০২১ সাল পর্যন্ত বলবৎ থাকলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে না পারে, সে জন্য শাহীনকে কব্জ করে নেয় সরোয়ার। যার কারণে এবায়েদুল হক চাঁনের একার পক্ষে কোনভাবেই কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

আলোচনায় উঠে এসেছে, কেন্দ্রীয় নেতারা বরিশালে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের কোনো সভা সমাবেশ করতে পারতেন না শাহীনের প্রতিবন্ধকতার কারণে। এর নেপথ্যে রয়েছে হীন রাজনীতি। দলের এই ভঙ্গুর দশা থেকে উত্তরণে ও দলকে ঢেলে সাজাতে পদক্ষেপ নেয় দলের ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সরোয়ারকে মাইনাস করে বরিশাল মহানগর ও জেলা দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন দলের হাইকমান্ড। মৌন মাইন্ডে হাইকমান্ডের উপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয় সরোয়ার।

কিন্তু সরোয়ারের রোষাণলে পরে দীর্ঘদিন ঘর বন্ধি থাকা নেতাকর্মীরা তারেক রহমানের দেয়া নতুন আহবায়ক কমিটিকে সাধুবাদ জানিয়ে স্বতস্ফুর্তভাবে রাজপথে নেমে যায়। একক আধিপত্য হাত ছাড়া হওয়ায় কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারেনি সরোয়ার। যার ফলশ্রুতিতে বরিশাল জেলা দক্ষিণ ও মহানগর বিএনপির নতুন আহবায়ক কমিটি কার্যক্রম বাঁধাগ্রস্ত করতে সরোয়ার শুরু করেন নানা কূট-কৌশলের অপতৎপরতা। কৌশলে কেন্দ্রীয় বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সংগঠনিক সম্পাদক শিরিনের সাথে আতাঁত করেন সরোয়ার।

সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে সরোয়ারের অনুসারী বিতর্কিত বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাদক ব্যবসায়ী কথিত সর্বহারা নেতা অহিদুল ইসলাম প্রিন্সসহ সকল নেতাকর্মীরা এখন নতুন করে তরি ভিড়িয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনের দরবারে। এমনকি শিরিনের দ্বারস্থ হচ্ছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার নিজেও। শিরিন ও সরোয়ারসহ অন্যান্য নেতাদের মধ্যস্ততাকারী হিসেবে ভুমিকা পালন করছেন ছাত্রদলের নেতা শিরিনের সহচর মাসুম।

আরও খবর

Sponsered content