অপরাধ-আইন-আদালত

সংবিধান মানুষের রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার এখতিয়ার দেয়নি-অ্যাটর্নি জেনারেল,মো. আসাদুজ্জামান

  প্রতিনিধি ২৭ আগস্ট ২০২৪ , ২:৪৪:০৫ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন,মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশ ও দেশের সংবিধান মানুষের রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার এখতিয়ার দেয়নি।বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার মানুষের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা।

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও দলটির নিবন্ধন বাতিল বিষয়ে করা এক রিটের শুনানিতে আজ মঙ্গলবার অ্যাটর্নি জেনারেল এ কথা বলেন।বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব–উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এই শুনানি হয়।

রিটটি গ্রহণযোগ্য নয় এবং ভ্রান্ত ধারণাপ্রসূত উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন,একটি গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কর্তৃত্ববাদের অবসানের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পালন করছে।এই সরকার প্রতিহিংসার রাজনীতি করতে চাইবে—কেউ এটি প্রত্যাশা করলে,তা গ্রহণযোগ্য নয়।কারণ এই সরকার মনে করে…মানুষের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক দল অন্যতম প্ল্যাটফর্ম।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিশ্চিতভাবে কিছু অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে বলে উল্লেখ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।তিনি বলেন,আওয়ামী লীগ সরকার এক দশকের বেশি সময় ধরে দেশে গুম,খুন, হত্যা ও অরাজকতার একটা অপরাধপ্রবণ জায়গায় জড়িয়ে পড়েছিল।সেটির অর্থ এই নয় যে আওয়ামী লীগে কোনো ভালো নেতা–কর্মী নেই।তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগকে যাঁরা সমর্থন করেন,তাঁদের রাজনৈতিক অধিকার,তাঁদের একটা আদর্শকে সমর্থন করার অধিকার থাকবে না—এটি এই সরকার মনে করে না।অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন,যদি তাদের (আওয়ামী লীগ) কেউ অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকেন,সে জন্য পৃথক আইনে অপরাধের আলাদা বিচার হবে;কিন্তু একজন মানুষের একটা আদর্শকে সমর্থন করার সাংবিধানিক যে অধিকার,সে অধিকার যাতে কোনোভাবেই ক্ষুণ্ন না হয়,সরকার এ বিষয়ে সচেতন।

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন,সংবিধানের মৌলিক অধিকার–সংক্রান্ত অধ্যায়ে মানুষের সংগঠন করার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।কোনো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিলের মধ্য দিয়ে সেই অধিকার ক্ষুণ্ন করা হবে বলে মনে করি।’ রিটের বিষয়বস্তুতে আপত্তি জানিয়ে তিনি বলেন,যার (আওয়ামী লীগ) নিবন্ধন বাতিল চাওয়া হয়েছে,তাকে রিটে পক্ষ করা হয়নি।নোটিশও দেওয়া হয়নি।জনস্বার্থের মামলার জন্য আবেদনটি ভ্রান্তধারণাপ্রসূত।অবশ্য অন্যান্য সময়ে জনস্বার্থে মামলার অনেক অপব্যবহার হয়েছে।

‘বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে এই জনতা’—উদ্ধৃত করে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন,কারা এই প্রক্ষাপট তৈরি করেছে?বিচার বিভাগকে কীভাবে ব্যবহার করা হয়েছে?বিচার বিভাগ কী ভূমিকা পালন করেছে?বিচার বিভাগ আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কীভাবে এখতিয়ারের অতিপ্রয়োগ করেছে—এই দিকগুলো দেখার বিষয় রয়েছে।তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগের ওপর আক্রমণ হলে আমার হৃদয়েও রক্তক্ষরণ হয়।দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি কর্তৃত্ববাদী সরকারের অবসান ঘটেছে।কর্তৃত্ববাদের অবসানের মধ্য দিয়ে অপরাধের বিচার করা সম্ভব,কার কী ভূমিকা ছিল।’ তিনি বলেন,একটি সংগঠনকে বন্ধ করে দিয়ে,হাজার হাজার,লাখ লাখ সমর্থক,আদর্শে যাঁরা বিশ্বাস করেন,তাদের রাজনৈতিক অধিকার ক্ষুণ্ন করার বিরুদ্ধে এই সরকার।এ ধরনের রিট যদি গ্রহণ করা হয়,তা সংবিধানের মৌলিক চেতনা,মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক ও দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক চেতনার পরিপন্থী হবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন,কোনো একটি রাজনৈতিক দলও এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কথা বলেনি। তাদের (রাজনৈতিক দল) বক্তব্য হচ্ছে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ (সমান সুযোগ) চান।এ ধরনের রিট করায় আবেদনকারীকে খরচ আরোপসহ রিটটি সরাসরি খারিজ করার আরজি জানিয়ে তিনি বলেন,রাজনীতি রাজপথে হওয়া উচিত,আদালতে নিয়ে আসা ঠিক নয়।

এর আগে ‘সারডা সোসাইটি’ নামের একটি সংগঠনের পক্ষে এর নির্বাহী পরিচালক আরিফুর রহমান ভূঁইয়া ১৯ আগস্ট রিটটি করেন।আদালতে তিনি নিজেই শুনানি করেন।শুনানির এক পর্যায়ে তিনি সময়ের আরজি জানান।পরে আদালত আগামী ১ সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য পরবর্তী দিন নির্ধারণ করেন।রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেদওয়ান আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

আরও খবর

Sponsered content