জাতীয়

মুক্তিযুদ্ধ,সংবিধান,জাতীয় সংগীতে ‘আঘাত’, রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান বাসদের

  প্রতিনিধি ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৪:৩৩:৩৪ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।মুক্তিযুদ্ধ,সংবিধান,জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকা,মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ও জাতীয় পতাকা পরিবর্তনের যেসব আলোচনা হচ্ছে,তা ‘ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দেওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ।

বৃহস্পতিবার বাসদ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ এক বিবৃতিতে বলেন, “১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ,সংবিধান,জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকা, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা এসব মীমাংসিত বিষয়কে অমীমাংসিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী একদল মানুষ,যারা মুক্তিযুদ্ধকে কখনোই মেনে নিতে পারেনি।”

মুক্তিযুদ্ধ,সংবিধান,জাতীয় সংগীতের ওপর যে কোনো আঘাত,গণঅভ্যুত্থান ২৪ এর চেতনা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী গণতন্ত্রকামী ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধভাবে ‘রুখে দাঁড়ানোর’ আহ্বান জানান তিনি।

বিবৃতিতে বলা হয়,“স্বাধীনতা পরবর্তী ৫২ বছরে শাসকশ্রেণি সাম্য,মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার এবং রাষ্ট্রীয় ৪ মূলনীতি গণতন্ত্র,সমাজতন্ত্র,ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতিয়তাবাদ এই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার বিপরীতে দেশ পরিচালনা করে বিশেষ করে গত ১৫ বছরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার চরম দুঃশাসন জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল।”

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতকে ‘স্বাধীনতার অস্তিত্বের পরিপন্থি’ আখ্যা দিয়ে তা পরিবর্তনের দাবি জানান জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী।

বাহাত্তরের সংবিধান ‘বৈধ নয়’ মন্তব্য করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করার দাবি করেন তিনি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন আমান আযমী।

তিনি বলেন, “শেখ মুজিব সাহেব ৩ লাখ বলতে গিয়ে ৩ মিলিয়ন বলেছেন এবং এটাই ৩০ লাখ হয়ে গেছে। কোনো জরিপ ছাড়া ৩০ লাখ শহীদ বলে বলে তারা মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।

“আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাই,আপনারা জরিপ করে বের করেন,একচুয়ালি ৩০ লাখ হোক আর ৩ কোটি হোক।আমার জানামতে,এটা ২ লাখ ৮৬ হাজার। তারা ৩ লাখকে ৩০ লাখ বানিয়ে ফেলেছে।এখনো সময় আছে, জাতিকে সত্য ইতিহাস জানতে দিন।আমাদের নতুন প্রজন্মকে মিথ্যার উপরে আপনারা গড়ে তুলতে দেবেন না। সত্যিকার একটা জরিপ করে আপনারা ব্যবস্থা করেন।”

সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর বিবৃতিতে বলা হয়,দেশ এবং জনগণের স্বার্থে নয় বরং শাসকরা নিজেদের ক্ষমতার স্বার্থে সংবিধানকে ১৭ বার সংশোধন করে এর চেহারা বদলে দিয়েছে।জনগণ সব ক্ষমতার মালিক,সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকার পরিপন্থি কোনো আইন সরকার প্রণয়ন করতে পারবে না।

“সংসদের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতিতে যে কোনো আইন প্রণয়ন করতে পারবে এটা এনে জনগণের সার্বভৌমত্বের জায়গায় সাংসদদের সার্বভৌমত্ব কায়েম করে কালাকানুন জারির সিংহদ্বার খুলে দিয়েছে।সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ যা সাংসদদের ব্যক্তি স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে এই ধরনের অগণতান্ত্রিক ধারা ও সংশোধনী বাতিলের দাবি আমাদের দল বাসদসহ বামপন্থিরা দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছি।”

বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার সাংবিধানিক স্বীকৃতি,সম্পত্তির উত্তরাধিকারে নারী-পুরুষের সমানাধিকার,২৬ অনুচ্ছেদ থেকে শুরু হওয়া মৌলিক অধিকারগুলো আইনের মাধ্যমে কার্যকর করার বিষয়টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি নির্বাহী,বিচার,আইন বিভাগ তথা ক্ষমতা কাঠামোর পৃথকীকরণ তথা ভারসাম্য প্রতিষ্ঠাসহ ’৭২ এর সংবিধানের ‘অসম্পূর্ণতা’ দূর করে সেটার মৌল কাঠামো অক্ষুণ্ন রেখে যুগোপযোগী করার দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।

“কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনা তারা ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের বৈষম্য বিলোপ ও ফ্যাসিবাদ পুরুত্থান রোধ করার চেতনা ও আকাঙ্ক্ষা ব্যর্থ করতে মুক্তিযুদ্ধ,সংবিধান এমনকি জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের যে আওয়াজ দিচ্ছে তা দেশের জন্য এক অশনি সংকেত।ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মূল চেতনা হল সমাজের সকল বৈষম্য বিলোপ এবং ফ্যাসিবাদী শাসনের ভিত্তি উপরে ফেলা।”

বিবৃতিতে অভ্যুত্থানের মূল চেতনাকে ব্যর্থ করার যে কোনো অপতৎপরতা রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান বজলুর রশীদ ফিরোজ।

আরও খবর

Sponsered content