প্রতিনিধি ২৪ আগস্ট ২০২৪ , ৪:৫৮:৩৯ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে সম্প্রতি কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে কঠোর অবস্থান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।যেসব আইনজীবী এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের একজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।দু’জনকে কারন দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়েছে ফোরামের পক্ষ থেকে।নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে ফোরাম সূত্রে জানা গেছে।
ফোরামের একাধিক নেতা জানান,জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন।আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কার্যকর করতে সবসময় দৃঢ় ভূমিকা রেখে চলেছে।গুটি কয়েক সদস্যের নেতিবাচক বা উচ্ছৃঙ্খলা কর্মকান্ডের কারণে ফোরামের ভাবমূর্তিতে কালিমা লেপন হবে সেই সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না।যে সব সদস্য গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটালে তার বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সংগঠনের শৃঙ্খলাভঙ্গের সঙ্গে যে যা যারা জড়িত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে বলে জানান ফোরামের একাধিক নেতা।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সহিংস ঘটনা ঘটে।পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিচার গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেনী-পেশার মানুষ।সেই কোটা আন্দোলন এক পর্যায়ে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়।ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এরপর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদত্যাগ করেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতি।শূণ্যতা পূরণে নিয়োগ দেয়া হয় নতুন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে।দায়িত্ব নিয়েই প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টে পুরোদমে বিচার কাজ শুরুর নির্দেশ দেন।পুন:র্গঠন করেন হাইকোর্টের অর্ধশত বেঞ্চ।সেসব বেঞ্চে এখন নির্বিঘ্নে বিচার কাজ পরিচালনা করছেন বিচারপতিরা।
তবে একটি বেঞ্চের বেঞ্চ কর্মকর্তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করায় মোহাম্মদ আলী নামে একজন আইনজীবীকে কারন দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। বিলুপ্ত করা হয়েছে ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিট।
এরই মধ্যে হাইকোর্টের ৫০ জন বিচারপতির অপসারন চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব ও ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম আশরাফ।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রচারের পর ফোরাম থেকে বিবৃতি দেন ফোরামের সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।বিবৃতিতে তারা বলেন,৫০ জন বিচারপতি অপসারনের দাবির সঙ্গে ফোরামের কোন সম্পৃক্ততা নাই।যারা অপসারনের দাবি করেছেন তারা ফোরামের কোন পর্যায়ের সদস্য নন।
এরপরই গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি অপসারন দাবিকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম নিজ চেম্বারে ছুরিকাঘাতের শিকার হন।
হাসপাতালে ভর্তির পূর্বে তিনি দাবি করেন,অ্যাডভোকেট কাইয়ুম তাকে ছুরিকাঘাত করেছেন।এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় কয়েকজন আইনজীবীকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।এছাড়া অ্যাডভোকেট কাইয়ুমকে ফোরাম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।আরো কয়েকজনকে কারন দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের একাধিক আইনজীবী বলছেন,গত ১৫ বছর ধরে একটানা দেশ শাসন করেছে আওয়ামী লীগ।এই শাসনামেল বিরোধী মতাদর্শের আইনজীবীরা নানা ধরনের মামলা,হামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন।বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গত তিনটি নির্বাচনে যেভাবে একতরফা ভোট করা হয়েছে তা নজিরবিহীন।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রহরায় বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী প্যানেলকে বের করে দিয়ে ভোট গ্রহন কখনই দেখেনি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যরা।এ নিয়ে নানা ক্ষোভও রয়েছে আইনজীবীদের মধ্যে।এই ক্ষোভের শিকার যেন ভিন্ন মতাদর্শের আইনজীবীরা না হন সেদিকে সচেষ্ট থাকতে হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন,তুমি অধম হইলে আমি উত্তম হইব না কেনো’-এই মর্মবাণী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রতিটি সদস্যকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।কেউ যেন কারো প্রতি অপেশাদারিত্বমূলক আচরণ না করেন,যদি কেউ করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দেশ দিয়েছেন।